জেলায় জেলায় জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেনারেল সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দেশের বিভিন্ন জেলায় আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে নেতা-কর্মীরা মিছিল-সমাবেশ করেন।

টাঙ্গাইল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেনারেল সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে টাঙ্গাইলে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। 

এদিন বিকেলে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌরউদ্যানে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

জেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর আহসান হাবীব মাসুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, সেক্রেটারী হুমায়ন কবীর, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম খান ও হোসনে মোবারক বাবুল, কর্ম পরিষদ সদস্য আব্দুল্লাহ তালুকদার, জেলা শিবিরের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের পর অনেক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিও মুক্তি পেয়েছে। আমাদের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাননি। প্রায় ১৩ বছর যাবত অন্যায়ভাবে কারাভোগ করছেন। এখনও দেশে বৈষম্য বিরাজমান। এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন বক্তারা।

পঞ্চগড়

কারাবন্দি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে দলটি।

বিকেলে পঞ্চগড় শহরের চৌড়ঙ্গী মোর থেকে মিছিলটি বের হয়। মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় তেঁতুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসেন।
জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন বলেন, “পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাবন্দি করা হয় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে। দীর্ঘ ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক আছেন তিনি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে গেলেও তার সাজানো মামলা থেকে এখনো মুক্তি মিলেনি এই জামায়াত নেতার।”

নওগাঁ

নিবন্ধন ফেরত ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

এসময় বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোষহীণভাবে ভারতীয় প্রভূত্ববাদ মেনে না নেওয়ায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে।”

দ্রুত সময়ের মধ্যে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি নিশ্চিত ও দলীয় নিবন্ধন এবং প্রতীক ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

সুনামগঞ্জ 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও সংগঠনের নিবন্ধন ফিরে পেতে সারাদেশের ন্যায় বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াত।

এদিন বেলা আড়াইটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ঐতিহ্য যাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ট্রাফিক পয়েন্ট চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট নুরুল আলমের সঞ্চালনায়, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান। 
 
এসময় তোফায়েল আহমেদ খান বলেন, “দেশবাসী আশা করেছিল যে, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার এটিএম আজহারুল ইসলাম স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিলাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের বিচারিক কার্যক্রমসমূহ সারাবিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত।”

তিনি আরো বলেন, “স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। রিমান্ডে নিয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও দেয়া হয়নি।”

কুমিল্লা 

বাংলাদেশ  জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা.

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “এটি এম আজরুল ইসলামকে মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষী ও ভূয়া আদালতের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বিগত সরকার। দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হওয়ার পর এটিএম আজহারের মুক্তি চেয়ে আন্দোলনে নামতে হয়েছে। এটি আমাদের চরম দুর্ভাগ্য। হয় এটিএম আজহারকে মুক্তি দিন, না হয় আপনারা বিদায় নিন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরাই বসিয়েছি। অথচ এই সরকারের কারো কারো ভেতরের ভারতের প্রেতাত্মা ভর করেছে।” 

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের ও দলের  সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল  এটিএম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে  দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচি  অংশ হিসাবে  কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

সাতক্ষীরা 

এটিএম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাতক্ষীরা জামায়াত। 

মঙ্গলবার বিকাল চারটায় সাতক্ষীরা-খুলনা রোড মোড় সংলগ্ন আসিব চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ মাঠে যেয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। 

বিক্ষোভ মিছিলটি নের্তৃত্ব দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। একই সময়ে শহরের চারটি প্রবেশ পথ দিয়ে শহরে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করে জামায়াত। 

সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায়  বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, গাজী নজরুল ইসলাম, শেখ নূরুল হুদা, প্রমুখ।

ঢাকা/কাওছার/নাঈম/সাজু/মনোয়ার/রুবেল/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আজহ র ল ইসল ম র ম ক ত র দ ব ত ইসল ম র স স ন মগঞ জ ত র আম র শহর র সরক র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। টানা তিন মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরের দুই মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ বিদায়ী অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।

পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।

দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।

এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।

দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ