ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন প্রশাসক হিসেবে মোহাম্মদ এজাজকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি একজন পরিবেশবিদ। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশনে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়া। এই পদ এক অর্থে মেয়র পদমর্যাদার। সে ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, একজন মেয়রের কাছ থেকে শহরবাসীর যা যা প্রত্যাশা থাকার কথা, নতুন প্রশাসকদের কাছেও হয়তো সেই প্রত্যাশাগুলোই থাকবে।

পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে বসবাসের যোগ্য শহরগুলোর যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেই তালিকায় ঢাকা শহর নিয়ম করে একদম শেষের দিকেই থাকে। অর্থাৎ ঢাকাকে এক অর্থে বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর একটি বলা যেতে পারে। এমন একটা শহরের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়া যেমন চ্যালেঞ্জিং, আবার একই সঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগও আছে।

ঢাকা শহরে জন্ম ও বেড়ে উঠা একজন নাগরিক হিসেবে বলতেই হচ্ছে, এ শহরের একটা বিশাল সংখ্যার মানুষ আসলে কোনো রকম নাগরিক সুবিধা পান না। না আছে তাঁদের একটা থাকার জায়গা কিংবা নিরাপদ পানি অথবা অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। এই মানুষগুলোকে নাগরিক সুবিধা দেওয়ার জন্য নতুন প্রশাসক চাইলেই উদ্যোগ নিতে পারেন। এটি কোনো রকেট সায়েন্সও নয়।

রুয়ান্ডার মতো দেশ, যে দেশটিতে জাতিগত দাঙ্গা লেগেই থাকত। অর্থনৈতিকভাবেও ওরা অনেক দুর্বল। সেই দেশটির একজন নেতা ঠিক করলেন, তিনি পুরো দেশটিকে ঢেলে সাজাবেন। সেই অনুযায়ী তিনি রাজধানী শহরের সব বস্তি ভেঙে বস্তিবাসীদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করলেন। পুরো শহরকে কমিউনিটি ক্লিনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসলেন। ফলাফল হচ্ছে রুয়ান্ডার রাজধানী এখন আফ্রিকার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর।

ঢাকাতেও সেটা করা যেতে পারে। ঢাকার আশপাশে খুব কম জায়গায় ছোট ছোট ফ্ল্যাট করে বস্তির মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করা যেতে পারে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই ‘সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন’ নামে একটি কার্যক্রম আছে। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাও আছেন।

এই বিভাগের কাজটা আসলে কী, আমার সঠিক জানা নেই। তবে আমি মনে করি, এই বিভাগে সমাজ ও সমাজের মানুষের কল্যাণ নিয়ে ভালো ধারণা আছে, এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। যিনি বস্তিবাসীদের কল্যাণে কাজ করবেন। তাঁদের পুনর্বাসনের দেখভাল করবেন।

আর এই পুরো প্রক্রিয়ার অর্থায়ন করা যেমন খুব বেশি খরুচে নয়, তেমনি টেকসই উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও ফান্ড পাওয়া যেতে পারে। এটি ভুলে গেলে চলবে না জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন।

ঢাকাকে কি আদৌ আমরা নিরাপদ নগর বলতে পারি?

আমার মনে হয় বেশির ভাগ নাগরিক বলবেন ‘না’। অনেক স্থানে তো সন্ধ্যার পর একা হেঁটে বেড়ানোই মুশকিল। এ ছাড়া চুরি ও ছিনতাই—এসব তো আছেই। সিটি করপোরেশন চাইলেই কমিউনিটি সিকিউরিটির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়ে নিরাপত্তা সেল তৈরি করা যেতে পারে। যাঁদের কাজ হবে নিজেদের এলাকাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা। শুধু দিনের বেলায় নয়, রাতেও। যাতে নাগরিকেরা চাইলেই রাতের বেলায়ও নিরাপদে চলাচল করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁরা দুই-তিন মাসের জন্য ইন্টার্ন হিসেবে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এটা হতে পারে বিনা বেতনে। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা একটা অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট পাবেন। আবার হতে পারে পার্টটাইম কাজ। প্রতিটি এলাকায় এমন সেল করে সেই সেলকে আবার আলাদা করে মনিটর করতে হবে; যাতে যাঁরাই পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে থাকবেন, তাঁরা যেন আবার কোনো খারাপ কাজে যুক্ত হয়ে না পড়েন।

একই কাজ করা যেতে পারে ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন করার ব্যাপারে। কমিউনিটি ক্লিনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রুয়ান্ডার মডেল এই ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বস্তিবাসীদের আলাদা বাসস্থানের পাশাপাশি দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতগুলোও খুব দ্রুতই উদ্ধার করতে হবে। ঢাকা শহরে হাঁটাচলার রাস্তা নেই বললেই চলে। এই কাজ নতুন প্রশাসকের উচিত হবে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা।

ঢাকায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ধুলাবালু ও পরিবেশদূষণের কারণে। গাড়ির শব্দে রাস্তায় বের হলে মনে হয় কান ফেটে যাচ্ছে। হর্নের শব্দ কী করে একদম কমিয়ে আনা যায়, সেদিকে যেমন নজর দিতে হবে; ঠিক তেমনি শহরজুড়ে যেন গাছ লাগানো যায় এবং সেগুলো টিকে থাকে; এ বিষয়েও নজর দিতে হবে।

মশা ও ডেঙ্গু নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আশা করছি, নতুন প্রশাসক এই বর্ষা আসার আগেই বর্তমানে যে মশার ওষুধগুলো আছে, সেগুলো পরীক্ষা করে দেখবে, আদৌ কার্যকর কি না। সেই সঙ্গে সঠিক সময়ে যেন মশা মারার কাজটি করা হয়।

ঢাকা শহরের নাগরিকদের জীবনের একটা বিশাল অংশ কেটে যায় রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে। এই ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য শহরজুড়ে বাস সার্ভিস চালু করতে হবে এমনভাবে, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বাসে চড়ার আগ্রহ দেখাবেন।

রাস্তাঘাটগুলোর কোথাও কেটে রাখা হয়েছে। কোথাও ম্যানহোল খোলা, কোথাও সোডিয়াম বাতি জ্বলে না; কোথাও আবার রাস্তার কার্পেট উধাও হয়ে গেছে! এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে।

মূল কথা হচ্ছে, সব শ্রেণির নাগরিকদের জন্য একটা নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহর চাই।

নতুন প্রশাসক আর কিছু না হোক, শহরের বস্তিবাসীদের জন্য আলাদা করে যদি কিছু করতে পারেন, সবার নিরাপত্তা টুকু নিশ্চিত করতে পারেন এবং ট্রাফিক জ্যামের একটা সমাধান করে যেতে পারেন, তাহলে ঢাকাবাসী হয়তো ওনাকে মনে রাখবেন। কারণ, এই শহরের নাগরিকদের চাওয়া অত্যন্ত কম। সেই ছোট ছোট চাওয়াগুলোও যখন পূরণ হয় না, তখন সামান্য নাগরিক সুবিধা পেলেও আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি।

আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র পদ ক জ কর র জন য র একট য শহর শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’

এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স