চলতি অর্থবছরে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট হতে ৬০০ জন অসচ্ছল ও দরিদ্র ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া, আর্থিক সাহায্য হিসেবে ৪ হাজার ৬২০ জন অসহায়-দরিদ্র ইমাম-মুয়াজ্জিনকে পাঁচ হাজার টাকা হারে দুই কোটি ৩১ লাখ টাকা দেবে মন্ত্রণালয়। 

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য জানানো হয়। 

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে ট্রাস্টভুক্ত ইমাম ও মুয়াজ্জিনে সংখ্যা প্রায় ৮৪ হাজার। ট্রাস্টের মাধ্যমে কোন ইমাম বা মুয়াজ্জিন মারাত্মক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব, দুরারোগ্য ব্যাধি ইত্যাদি কারণে অক্ষম হয়ে পড়লে তাকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, কোনো ইমাম বা মুয়াজ্জিন আকস্মিক মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য, তাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য সাহায্য এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়াসহ সার্বিক কল্যাণে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে। 

এদিকে, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইমামদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। 

বুধবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট হতে নির্বাচিত ইমাম মুয়াজ্জিনদের মাঝে আর্থিক অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণের চেক বিতরণকালে তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইমামরা প্রশিক্ষণের আওতায় আসছে। এ প্রশিক্ষণে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রশিক্ষণ মডিউল অনুসরণ করা হবে। তুরস্কের আল মুয়াসসাসা দিয়ানা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।  এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।’’

খালিদ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট একটি সমাজবান্ধব ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুদমুক্ত ঋণ ও আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে একটি মিনারেল ওয়াটার প্লান্ট স্থাপনের বিষয়েও কাজ চলছে।’’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক শফিউল আলম, ধর্ম উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদসহ ইফার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল য ণ আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ