‘হয়রানি করতে’ খালেদা জিয়াকে আসামি
Published: 19th, February 2025 GMT
নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ আট আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম গতকাল বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করতে নাইকো মামলায় জড়ানো হয়েছে।
খালাস পাওয়া বাকি সাতজন হলেন– খালেদা জিয়ার সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এর মধ্যে কাশেম শরীফ, মীর মইনুল হক ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী পলাতক।
রায়ের আগে বিচারক বলেন, ‘প্রশ্ন হতে পারে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আসামির আত্মপক্ষ শুনানি করা হচ্ছে। ডিএলআর-এর ১৭ থেকে ২১ পর্যন্ত এ বিষয়ে উল্লেখ আছে, কোনো আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরায় থাকলে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ শুনানি করা যায়। রায়ও দেওয়া যায়।’
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার মামলা বাতিল করা হয়েছিল। তবু এ মামলার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়েছে। আসামি ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে তিনি চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাকে নির্যাতন করে জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। সেখানেও তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার কথা বলেছেন।’ বিচারক বলেন, ‘সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ১৬৪-কে ট্রু (সত্য) বলার সুযোগ নাই। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের জড়িত করার জন্য এ ১৬৪ নেওয়া হয়েছে।’
রায়কে ঐতিহাসিক ও দৃষ্টান্তমূলক বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সরকার খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে এ মামলা করেছিল। সেখানে শেখ হাসিনাও আসামি ছিলেন। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে নাইকো মামলা থেকে কোয়াশম্যান্ট (বাতিল) নেন। কিন্তু থেকে যায় খালেদা জিয়ার মামলাটি। মূলত রাজনৈতিকভাবে তাঁর সম্মানহানি করতে নাইকো মামলাকে ব্যবহার করে ক্ষমতাচ্যুত সরকার।’
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এ দিন রাখা হয়। এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য হয়েছে।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় মামলায়।
খালেদার সঙ্গে অবিচার হয়েছে: আপিল বিভাগে ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন
রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন ও বিচার বিভাগের সীমাহীন অন্যায়-অবিচারের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবিচারের শিকার হয়েছেন– এমন দাবি করে তাঁকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দিতে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চে গতকাল জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন এক মামলার শুনানিতে মৌখিকভাবে এই আবেদন করেন।
পরে এ প্রসঙ্গে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছি, এ দেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে নষ্ট হয়েছে এবং ফ্যাসিজম যেভাবে ডেভেলপ করেছে, তার অধিকাংশের দায় বিচার বিভাগের। একজন নাগরিক হিসেবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। তাঁকে সাজা দেওয়া হয় এবং সাজা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সে মামলাটি যখন আপিল বিভাগে আসে তখন দেখা গেল, তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে একটা প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ছিল।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।