ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলগের মধ্যকার বৈঠক-পরবর্তী পরিকল্পিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে ইউক্রেনের চলা যুদ্ধের অবসান কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হওয়ায় এ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি ও অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলগের কথা বলার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত বদলে তাঁরা শুধু সাংবাদিকদের ছবি তোলার সুযোগ দেন। এ সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী তাঁরা কোনো বিবৃতি বা প্রশ্নের উত্তর দেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সেরহি নিকিফোরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন বাতিলের অনুরোধ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুনশান্তি আলোচনায় ‘কার্ড’ রাশিয়ার হাতে: বিবিসিকে ট্রাম্প১৯ ঘণ্টা আগে

সম্প্রতি ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতবিরোধ শুরু হওয়ার মধ্যে আকস্মিকভাবে কিয়েভ সফরে যান কেলগ। দুই নেতার মধ্যকার এ বিরোধ তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধে দেশটির প্রতি মার্কিন সমর্থনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও সন্দেহ তৈরি করছে।

জেলেনস্কি ও কেলগের সংবাদ সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন। বৈঠক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোকচিত্রী ও ভিডিও সাংবাদিকদের একটি কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। বৈঠকে জেলেনস্কি ও কেলগ করমর্দন করে একে অপরের মুখোমুখি বসেন।

সাংবাদিকদের এ সময় জানানো হয় যে কোনো সংবাদ সম্মেলন হবে না। জেলেনস্কির মুখপাত্র নিকিফোরভ হঠাৎ এ পরিবর্তনের কোনো কারণ জানাননি। তিনি শুধু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন প্রতিনিধিদলও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। কেন সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে, সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস।

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই নেতার কথা বলার কথা ছিল। এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনে কী ঘটছে, তা ব্যাখ্যা করার ও কেলগকে তা দেখানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরক্ষণশীল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অন্যতম স্থপতি কেলগ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের প্রতিরক্ষাবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ছিলেন।

জেলেনস্কি তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, কেলগের সঙ্গে বৈঠকে ভালো হয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তাঁরা ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের বন্দীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে বদল: ইউরোপের ক্ষুব্ধ নেতারা কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জেলেনস্কি আরও লিখেছেন, ‘আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠাকে নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী করতে পারি। আর এটি অবশ্যই করতে হবে, যাতে রাশিয়া আর কখনো যুদ্ধ বাঁধাতে না পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে একটি শক্তিশালী ও সত্যিকার অর্থে উপকারী চুক্তির জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন।’

সম্প্রতি জেলেনস্কি ও ট্রাম্প একে অন্যের সমালোচনা করেন। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র গত মঙ্গলবার ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে কাজ শুরু করতে একমত হওয়ার পর এ কাদা–ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। ফলে ট্রাম্প রাশিয়াকে একঘরে করার তিন বছরের মার্কিন নীতি হঠাৎ করেই পরিবর্তন করেন।

আরও পড়ুনআপনার এই যুদ্ধ শুরু করাই ঠিক হয়নি১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ইউক র ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ