হবিগঞ্জের বাহুবলে ঘর থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। আজ শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ওই নারীর নাম মিনারা খাতুন (৩৫)। তাঁর বাড়ি উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামে। তিনি উপজেলার মিরপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। তিনি বাহুবল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল আহাদ ইবনে মালেকের স্ত্রী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নারী শাখার নেত্রী ছিলেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর পাইলট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মিনারা খাতুন তাঁর স্বামী ও এক শিশুসন্তানকে নিয়ে উপজেলার জয়পুর গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। বাড়িটি তাঁরা প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস আগে নির্মাণ করেন। গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে নিহতের স্বামী আবদুল আহাদ বাড়িতে এসে দেখেন, তাঁর স্ত্রীর মরদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

নিহতের স্বামী আবদুল আহাদ দাবি করেন, তিনি তাঁর দল জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কাজ শেষ করে রাত প্রায় আটটার দিকে বাড়িতে ফেরেন। এসে দেখেন, তাঁর ঘরের দরজা খোলা। পুরো ঘর অন্ধকার। তিনি তাদের শোবার ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দেখতে পান, বিছানায় তাঁর স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ। পেটে ছুরি। তাদের সাত মাস বয়সী সন্তান খাটের নিচে পড়ে আছে। তবে ঘরের অন্যান্য জিনিস ঠিকই আছে।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয় পুলিশের। প্রতিবেশীরা বলেন, তাঁরা নিহতের স্বামীর চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে যান। তবে এর আগে বা পরে কেউ এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডটি রহস্যজনক। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, ছুরিকাঘাতেই ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহতের স্বামী ছাড়া পাড়া–প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের স্বামীর বক্তব্য আমলে নিয়ে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। এখনো মামলা হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল মরদ হ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ