চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শেষে সন্ধ্যা ছয়টায় প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এর আগে সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা ও ধর্ম অবমাননার ঘটনায় চলতি ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ১১ জনই ছাত্রী। তাঁদের একজনকে ধর্ম অবমাননা ও বাকি ১০ জনকে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যে ছাত্রীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সিন্ডিকেট এটি প্রত্যাহার করেছে। অর্থাৎ ওই ছাত্রীর সনদ বাতিল হচ্ছে না। বাকিদের বহিষ্কারাদেশ বহাল রয়েছে। তবে তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।

সাত স্থাপনার নতুন নাম

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ছাত্রদের আবাসিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি এখন থেকে ৪ আগস্ট আন্দোলনে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো.

ফরহাদ হোসেন হল। আর দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবনের আগের নাম ছিল সাবেক আবু ইউসুফ ভবন। আবু ইউসুফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন। এটি এখন থেকে আন্দোলনে শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন। জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের নতুন নাম এখন বিজয় চব্বিশ হল। আর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের নতুন নাম জুলাই বিপ্লব উদ্যান।

ছাত্রীদের আবাসিক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম এখন থেকে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল। আর শেখ কামাল জিমনেসিয়ামের নতুন নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম।

অপর দিকে ছাত্রদের জন্য নতুন একটি আবাসিক হল করা হবে। পুরোনো শামসুন নাহার হলের জায়গায় করা এই হলের নাম হবে ফজলুল কাদের চৌধুরী হল। তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ পরিবারের সব নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে নতুন নামেই লেখা হবে।’

প্রতিবাদ অব্যাহত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বেলা তিনটা থেকেই এই দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলছিল। তাঁরা এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি ফেসবুকে করা মন্তব্যের জন্য প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের পদত্যাগও চেয়েছেন।

জানতে চাইলে কর্মসূচিতে থাকা বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, অন্যায়ভাবে শুধু প্রতিবাদ করার কারণে ৯ ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা এই বহিষ্কারাদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন সিন্ডিকেট থেকে ন্যায়বিচার পাবেন। তবে তা পাননি। অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেও প্রক্টর তাঁর পদে বহাল রয়েছেন। এমনটা চলতে পারে না। শিগগিরই তাঁরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা, ধর্ম অবমাননার ঘটনায় চলতি ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলে ছাত্রীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। ওই হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডাও হয় আবাসিক ছাত্রীদের। পাশাপাশি এ সময় ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা নৌকা ভাঙার বিপক্ষে নন। বরং প্রশাসন যেন এটি ভাঙে, সে দাবি করেছিলেন। এ জন্য তাঁরা আগেই প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে প্রশাসন সেটি ভাঙেনি। উল্টো মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী সেটি ভাঙতে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১২ শ ক ষ র থ এখন থ ক হল র ন ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ