১২ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বহাল, সাত স্থাপনার নতুন নাম
Published: 22nd, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে সন্ধ্যা ছয়টায় প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এর আগে সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা ও ধর্ম অবমাননার ঘটনায় চলতি ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ১১ জনই ছাত্রী। তাঁদের একজনকে ধর্ম অবমাননা ও বাকি ১০ জনকে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যে ছাত্রীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সিন্ডিকেট এটি প্রত্যাহার করেছে। অর্থাৎ ওই ছাত্রীর সনদ বাতিল হচ্ছে না। বাকিদের বহিষ্কারাদেশ বহাল রয়েছে। তবে তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।
সাত স্থাপনার নতুন নাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ছাত্রদের আবাসিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি এখন থেকে ৪ আগস্ট আন্দোলনে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো.
ছাত্রীদের আবাসিক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম এখন থেকে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল। আর শেখ কামাল জিমনেসিয়ামের নতুন নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম।
অপর দিকে ছাত্রদের জন্য নতুন একটি আবাসিক হল করা হবে। পুরোনো শামসুন নাহার হলের জায়গায় করা এই হলের নাম হবে ফজলুল কাদের চৌধুরী হল। তিনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ পরিবারের সব নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে নতুন নামেই লেখা হবে।’
প্রতিবাদ অব্যাহত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বেলা তিনটা থেকেই এই দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলছিল। তাঁরা এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি ফেসবুকে করা মন্তব্যের জন্য প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের পদত্যাগও চেয়েছেন।
জানতে চাইলে কর্মসূচিতে থাকা বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, অন্যায়ভাবে শুধু প্রতিবাদ করার কারণে ৯ ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা এই বহিষ্কারাদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন সিন্ডিকেট থেকে ন্যায়বিচার পাবেন। তবে তা পাননি। অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেও প্রক্টর তাঁর পদে বহাল রয়েছেন। এমনটা চলতে পারে না। শিগগিরই তাঁরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা, ধর্ম অবমাননার ঘটনায় চলতি ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলে ছাত্রীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। ওই হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডাও হয় আবাসিক ছাত্রীদের। পাশাপাশি এ সময় ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে।
ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা নৌকা ভাঙার বিপক্ষে নন। বরং প্রশাসন যেন এটি ভাঙে, সে দাবি করেছিলেন। এ জন্য তাঁরা আগেই প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে প্রশাসন সেটি ভাঙেনি। উল্টো মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী সেটি ভাঙতে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১২ শ ক ষ র থ এখন থ ক হল র ন ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
আরো পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
ঢাকা/শরিফুল/রফিক