হঠাৎ আবিষ্কার করলেন আশপাশে কেউ নেই আপনার। দুঃখগুলো নিজেই পুষে যাচ্ছেন আনমনে। শোনার কেউ নেই। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আপনাতে দৃষ্টি নেই কারও। নিজের প্রিয় মানুষটাও ইদানীং ব্যস্ত চাকরি নিয়ে। কখনও নিজেকে নিয়ে। ফিরে তাকানোর সময় কোথায়? আপনার চাকরি নেই, তাই হয়তো আর্থিকভাবে সাপোর্ট দিচ্ছেন তিনি। আপনার প্রতি তাকিয়ে মিষ্টি হেসে দুটি আশার কথা শোনানোর সময় নেই তার। ভাবছেন আত্মহত্যা কিংবা ছাড়ার কথা। অথবা অন্য কিছু?
প্রতিনিয়ত চলার পথে এমন সমস্যা ঘটেই চলেছে। কেউ এগুলো সহজে কাটিয়ে ওঠেন, কেউ আবার ফেঁসে যান। ফেঁসে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই ঢের! খুব কম মানুষই চূড়ান্ত সময়ে নিজেকে উদ্ধার করতে পারেন।
বাধার মুখোমুখি
চলতি পথে বাধার মুখোমুখি হতেই হয় আমাদের। এটিই স্বাভবিক। এ নিয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে ভাবনায় বসে কাজ নেই। শুধু মানসিক অবস্থাটা শক্ত রাখুন। যে কোনো সময় যে কোনো বাধার মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন। মাথায় রাখবেন– আপনাকে এসব বাধা পেরোতেই হবে। পাশ কাটিয়ে বা বাদ দিয়ে সামনে যাওয়া সম্ভব না। কিংবা থেমে যাওয়াও যাবে না। পথ একটাই- সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
রুখে দাঁড়ানোই সহজ রাস্তা
কখনও কোনো অবস্থাতেই বাধাকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে। সবসময় চেষ্টা করবেন রুখে দাঁড়াতে। এতে হয়তো কষ্ট হবে। এটিই সবচেয়ে সহজ রাস্তা। একবার যদি রুখে দিতে পারেন, একবার যদি তাকে চোখ রাঙাতে পারেন, এরপর আর মনের ভেতর ভয়টা কাজ করবে না। পরবর্তী বাধাগুলো সহজেই ডিঙিয়ে যেতে পারবেন।
ঠান্ডা মাথায়.
আপনার জীবন প্রবহমান। এই প্রবহমানতা থাকা মানেই সমস্যার চোখ রাঙানির মুখোমুখি হওয়া। বয়ে চলা জীবনে সমস্যা, ভাবনা, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জীবনে বহুবার আসবে। প্রতিবারই এসব টেক্কা দিতে হবে। এই চিন্তাটা যখন মাথায় রাখবেন, দেখবেন ভাবনার জগৎটা আপনার হয়ে গেছে অনেক সহজ এবং সাবলীল।
সমাধানের সহজপাঠ
প্রচণ্ড দুঃসময়ে সাধারণত কাউকে কাছে পাওয়া যায় না। এটিই প্রকৃতিপ্রদত্ত সমস্যা। তাই চিন্তা-ভাবনা করে তা থেকে ফল বের করা নিজের কাঁধেই বর্তায়। তারপরও যদি সুযোগ থাকে তবে
ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিন। আপনার যদি পরামর্শে অ্যালার্জি থাকে তবে বড়রা যেভাবে এমন বিপদ সামলে উঠেছেন তাদের দিকে চোখ বোলান। কেউ পরামর্শ দিতে চাইলে সেই পরামর্শগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। u
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল