ভাঙা হাটে জীবনের হিসাব কষেন গরু ব্যবসায়ী ইলিয়াস
Published: 24th, February 2025 GMT
বেচাকেনা শেষ। ভাঙা হাট। স্থানীয় লোকজন বলেন, ‘চিকনাগুলের গরুর বাজার’। এর অবস্থান সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায়। আগে-পিছে দরজা আর বেষ্টনীহীন টিনশেডের একটি ঘর। ভেতরে দুই সারিতে অসংখ্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে রাখা। সেসব খুঁটিতে চারটি গরু বাঁধা। পাশেই একটি বেঞ্চ। সেখানে বসেন আছেন চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। কপালে তাঁর চিন্তার ভাঁজ।
কাছে গেলে লোকটির নিমগ্নতা কাটে। শুরুতে ক্রেতা ভেবে ভ্রম করেন। পরে পরিচয় জানতে পেরে মনের যাবতীয় সুখ-দুঃখের ঝাঁপি মেলে ধরেন। মো.
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইলিয়াসের সঙ্গে কথা হয়। স্থানীয় দেশি গরুর বাজার হিসেবে সিলেটজুড়ে এ হাটের বেশ সুনাম। প্রতিদিন হাটে বেচাকেনা চললেও সোম ও বৃহস্পতিবার বাজারবার হিসেবে পরিচিত। ওই দুই দিন আশপাশের গ্রাম ও উপজেলা থেকে লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন। মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলে। অবশ্য শীতকালে রাত ১০টার দিকেই কেনাকাটা শেষ হয়ে যায়।
ইলিয়াস বলেন, ‘গরুর ব্যবসায় আর আগের মতো ইনকাম নাই। পরশু (গত মঙ্গলবার) পাঁচটা গরু বেচছি। গতকাল (গত বুধবার) আর আইজ (গত বৃহস্পতিবার) একটা গরুও বিক্রি হইছে না। চিন্তাত আছি। সংসার চালাইতে খুব কষ্ট হয়। সবজির মৌসুম হওয়ায় এখন আমরার এলাকাত সবজির দাম একটু কম। এর বাইরে সব জিনিসের দাম বাড়তি। হালকাপাতলা কিনলেই আয় শেষ।’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গৌরকুচি গ্রামে ইলিয়াসের বাড়ি। সংসারে মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। পাঁচজনের পরিবার চালাতে তাঁকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। ইলিয়াস বলেন, নিজে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। আর কোনো কাজ না জানায় ১০ বছর আগে গরুর ব্যবসায় নেমেছেন। এর পাশাপাশি জাফলং পাথরকোয়ারিতে পাথর তোলার কাজ করতেন। তবে ২০২০ সালের পর কোয়ারিতে পাথর তোলা বন্ধ হয়ে পড়ায় সে কাজ বন্ধ আছে। এখন একমাত্র গরু বিক্রির আয়েই তাঁর সংসার চলে।
প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি গরু ইলিয়াস বিক্রি করতে পারেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর ও তোয়াকুল বাজার আর বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিনি গরু কেনেন। এ ছাড়া রাজশাহী থেকেও মাঝেমধ্যে কেনেন। চিকনাগুল বাজারে গরু রাখার ঘর আর নিজের আবাসনের জন্য প্রতি মাসে ভাড়াবাবদ ১০ হাজার টাকা তাঁর খরচ হয়। এর বাইরে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার টাকা এবং খাওয়াবাবদ প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে।
ইলিয়াস বলেন, চিকনাগুল বাজারে ১৯ জন গরু ব্যবসায়ী আছেন। চাহিদার চেয়ে বেশি ব্যবসায়ী থাকায় সব ব্যবসায়ীই খুব বেশি গরু বিক্রি করতে পারেন না। সব খরচ বাদে তাঁর প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে। এ টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে আর মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ আয় থেকে কুলোতে পারেন না। তাই সব সময় ধারকর্জ করে সংসার চালাতে হয়।
দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাপন আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘সব জিনিসের দাম চড়া। বিকল্প ব্যবসার কথা ভাবতে হইব। নইলে ঠেকা যাইত নায়!’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় পয়:নিস্কাশন ড্রেন থেকে মরদেহ উদ্ধার
ফতুল্লায় ৪৮ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে ফতুল্লার শিহাচর নূর মসজিদ সংলগ্ন পয়:নিস্কাশন ড্রেন থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, স্থানীয় লোকজনের সংবাদের ভিত্তিতে ড্রেন থেকে অজ্ঞাত এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বয়স আনুমানিক ৪৮ বছর হবে।
তার বিস্তারিত নাম পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তার পড়নে লুঙ্গি ও শার্ট ছিল। প্রাথমিকভাবে শরীরের কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নি। ধারণা করা হচ্ছে, গতকাল রাতে কোনো একসময় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব হবে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।