রূপগঞ্জে ডাকাতদের হামলায় ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রের চোখে আঘাত
Published: 24th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় গতকাল রোববার গভীর রাতে ডাকাতদের হামলায় কাওছার মাহমুদ (২২) নামের এক ছাত্র আহত হয়েছেন। তাঁকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কাওছার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পড়েন।
হাসপাতাল সূত্র বলেছে, কাওছারের চোখে আঘাত লেগেছে।
ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাওছারের বরাত দিয়ে তাঁর বন্ধু পারভেজ মিয়া আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, কাওছারের বড় ভাই মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইপ্রবাসী এবং সপরিবার নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে থাকেন। সম্প্রতি কাওছারের বড় ভাই দেশে এসেছেন। আজ সকালে তাঁর দুবাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সে জন্য গতকাল গভীর রাতে কাওছার তাঁর বড় ভাইকে নিয়ে মদনপুরের বাসা থেকে প্রাইভেট কারে ঢাকায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে রওনা দেন। রাত দুইটার পর তাঁরা নারায়ণগঞ্জে জেলার রূপগঞ্জের ভুলতা ব্রিজ পার হলে দেখতে পান, রাস্তায় আড়াআড়ি করে একাধিক ট্রাক রেখে ব্যারিকেড দিয়েছে ৩০ জনের মতো দুর্বৃত্ত। আটকে পড়া যানবাহনে তারা ডাকাতি করছে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা কাওছারদের বহনকারী প্রাইভেট কারটির কাচ ভেঙে ফেলে এবং সেটি রামদা নিয়ে কোপায়। এর মধ্যে একটি কোপ প্রাইভেট কারের পেছনে বসা কাওছারের কপাল এবং ডান চোখে লাগে। এ সময় কাওছারের বড় ভাই সামান্য আহত হন।
পারভেজ মিয়া বলেন, ডাকাতেরা কাওছারের ভাইয়ের কাপড়চোপড়, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, বিমানের টিকিট, একটি পাসপোর্টসহ নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক গাড়ি আটকে ডাকাতি করে ডাকাতেরা। পরে কাওছারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা সেখান থেকে তাঁকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করেন।
পারভেজ মিয়া বলেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কাওছারের ডান চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দু-তিন দিন পর বোঝা যাবে কাওছারের চোখটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না।
আজ কাওছারের এক শিক্ষক মুমিত আল রশীদ কাওছার ও তাঁর ভাইয়ের ডাকাতের কবলে পড়া নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এটা পরে ছড়িয়ে পড়ে।
আজ বিকেলে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, রূপগঞ্জ থানার ওসি তাঁকে জানিয়েছেন সেখানে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটার কথা তিনি জানেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র বড় ভ
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।