‘আমি আপনাকে যে প্রস্তাব দিচ্ছি, আগামী ৫০ বছরে আর এমন একজন ইসরায়েলি নেতাকেও আপনি খুঁজে পাবেন না, যিনি আপনাকে এই প্রস্তাব দেবেন। সই করুন! সই করুন এবং ইতিহাস পাল্টে দিন!’

২০০৮ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এভাবেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানা চূড়ান্ত করার নিয়ে একটি চুক্তিতে সই করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ওলমার্টের বিশ্বাস ছিল, ওই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে পারবে।

ওই চুক্তি ছিল একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান—আজ সেই চুক্তির বাস্তবায়নকে অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।

যদি সে সময়ে সব পক্ষ ওই চুক্তি মেনে নিত এবং চুক্তির বাস্তবায়ন হতো, তবে আজ অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৯৪ শতাংশের বেশি ভূমি এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হতো।

ইসরায়েল ও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমা ভাগ করে ওলমার্ট যে মানচিত্র প্রস্তুত করেছিলেন, এখন সেটিকে এক রকম অলীক কল্পনা বলেই মনে হচ্ছে।

পরবর্তী সময়ে সাবেক ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী ওলমার্টের ওই মানচিত্র নিয়ে অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এর আগে কখনোই গণমাধ্যমে ওই মানচিত্র প্রকাশ পায়নি।

তথ্যচিত্র নির্মাতা নরমা পার্সি সম্প্রতি ‘ইন ইসরায়েল অ্যান্ড দ্য প্যালেস্টিনিয়ান্স: দ্য রোড টু সেভেনথ অক্টোবর’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।

ওই তথ্যচিত্রে ওলমার্ট ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জেরুজালেমে এক বৈঠকে মাহমুদ আব্বাসের সামনে উপস্থাপন করেন। এত দিন পর সেই মানচিত্রটি তিনি প্রকাশ্যে আনলেন।

ওলমার্ট তথ্যচিত্র নির্মাতাকে বলেন, ‘এই প্রথম আমি গণমাধ্যমে এই মানচিত্র দেখাচ্ছি।’

ওই মানচিত্রে ওলমার্ট পশ্চিম তীরের কতটুকু অংশ ইসরায়েলের দখলে যাবে তার বিস্তারিত উল্লেখ করেছিলেন, যা ছিল পশ্চিম তীরের মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সেই অংশের মধ্যে সেখানে ইহুদি বসতির একটি বড় অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিরোধ নিষ্পত্তিতে ১৯৯০–এর দশকের শেষ দিকে অনেকটা তেমন একটি প্রস্তাবই দেওয়া হয়েছিল।

ওই চুক্তিতে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার সীমানা ধরে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের জন্য সমপরিমাণ ভূমির যে দাবি এত দিন করে আসছিল, তা থেকে সরে আসতে রাজি ছিল বলেও জানান সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট।

চুক্তিতে ফিলিস্তিনিদের দুটি ভূখণ্ডকে একটি সুড়ঙ্গ সড়ক বা মহাসড়ক দিয়ে সংযুক্তর করার কথাও বলা ছিল। অতীতেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।

ওলমার্টের ওই প্রস্তাবের জবাবে মাহমুদ আব্বাস কী বলেছিলেন, সেটাও বলেছেন ওলমার্ট। তিনি বলেন, ‘আব্বাস তাঁকে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা খুব, খুব, খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।

ওলমার্টের পরিকল্পনায় বিরোধের কেন্দ্রে থাকা জেরুজালেমের ভাগ কীভাবে হবে, সেটা নিয়েও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা ছিল।

সেখানে বলা ছিল, উভয় পক্ষ নিজেদের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের একটি অংশ দাবি করতে পারবে। আর জেরুজালেমের পবিত্র ভূমি—যার মধ্যে ওল্ড সিটি, ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং তার আশপাশের এলাকার প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি ট্রাস্টি কমিটির হাতে থাকবে। ইসরায়েল, ফিলিস্তিনি, সৌদি আরব, জর্ডান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ওই ট্রাস্টি কমিটিতে থাকবেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই চ ক ত ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ