সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময় সমাবেশ থেকে ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বিচার ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল নারী শিক্ষার্থী। এতে বিভিন্ন হল ও বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন বলেন, ‘আগস্টের পর আবার এভাবে রাজুতে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তার জন্য কথা বলতে হবে, এর জন্য লজ্জা লাগছে। এই গণ–অভ্যুত্থানের পরও আমাদের নারীরা নিরাপত্তা পাচ্ছে না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে আশরেফা খাতুন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আপনারা কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেননি, যা দেখে অন্যরা ভয় পাবে। আমরা যে আন্দোলন করে এই সরকারকে বসিয়েছি, এই দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা চাই যাতে নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারি, আমাদের এই প্রত্যাশা যাতে রাষ্ট্র নিশ্চিত করে।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আছিয়া আক্তার বলেন, ‘জুলাই এখনো শেষ হয়নি, আমাদের সংগ্রাম এখনো চলছে। কারণ, নারীদের টুল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জুলাই পার হওয়ার পরও আমাদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নামতে হয়। ধর্ষণের ঘটনায় হয়তো গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু তাদের আবার জামিন দিয়ে দেওয়া হয়, যা আমরা জানতে পারি না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে অথচ আমরা শাস্তির কথা শুনতে পাই না।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে। কোথায় উন্নতি হচ্ছে? আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন, দেখুন। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ছেড়ে দেন।’

একই দাবিতে সন্ধ্যা সাতটায় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে একটি মশালমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ