মহানবী (সা.)–এর আবির্ভাবের আগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল নৈরাজ্যে ভরা। গোত্রভিত্তিক সমাজে ভেদাভেদই ছিল প্রধান। কলহ, যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি লেগেই থাকত। কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক কেন্দ্র না থাকায় আরব সমাজ ছিল বিভক্ত। নৈরাজ্যপূর্ণ আরবে মহানবী (সা.) যে অবিস্মরণীয় রাজনৈতিক বিপ্লব সাধন করেছিলেন তা বিশ্বের ইতিহাসে বিস্ময়কর।

 মহানবী (সা.

)–র রাজনৈতিক দায়িত্ব

আল্লাহ–তাআলা ঘোষণা করেছেন, তিনিই এ সত্তা যিনি তাঁর রাসুলকে হেদায়াত ও দীনের হকসহ পাঠিয়েছেন, যাতে আর সব দীনের ওপর একে বিজয়ী করে তোলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। (সুরা আল ফাতহ, আয়াত: ২৮)। একই দায়িত্বের কথা তিনি সুরা তাওবা (আয়াত: ৩৩) এবং সুরা আস-সফ্‌ফেও (আয়াত: ৯) উল্লেখ করেছেন।

ইসলাম নামের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানকে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্বাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ছিল মহানবী (সা.)–এর দায়িত্ব, যেন তা মানবসমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন হয়।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১৫ আগস্ট ২০২৩

মহানবী (সা.)–র রাজনীতির লক্ষ্য

ওপরের আয়াত থেকে বোঝা যায় মহানবী (সা.)–র রাজনীতি ছিল ইসলামের জন্য। ধর্মীয় চেতনাকে বদ্ধমূল করে আল্লাহ ভীরু চরিত্রবান মানুষ তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি, যেন ধর্মীয় বিধান মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তাহলেই সমাজের বর্বরতা ও নৈরাজ্য দূর করা সম্ভব। তাঁর রাজনীতির লক্ষ ছিল:

১. আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর নির্দেশিত আইন প্রতিষ্ঠা করা।

২. শিক্ষা, অর্থ, সমাজ, সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান পরিপালনের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

৩. মানুষে মানুষে বৈষম্য, অনাচার, অবিচার, অন্যায় দূর করে সাম্য, শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও সুষম শাসনের ব্যবস্থা করা।

৪. যোগ্য ও খোদাভীরু নেতৃত্বের মাধ্যমে সমাজ পরিচালনা করা।

৫. পরকালীন কল্যাণের পথকে সবার জন্য মসৃণ করে দেওয়া, যেন পার্থিব প্রবঞ্চনার গোলকধাঁধায় মানব জীবন বরবাদ হয়ে না যায়।

আরও পড়ুনবিয়ের পর খাদিজা (রা.) তাঁর সম্পদ কী করেছিলেন১৭ আগস্ট ২০২৩

মহানবী (সা.)–র রাজনীতির বৈশিষ্ট্য

মহানবী (সা.)-র রাজনীতির তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল:

১. চারিত্রিক ও নৈতিক শক্তি: সকল নবীর রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁদের চারিত্রিক ও নৈতিক শক্তি। তাঁদের নিষ্কলঙ্ক দীর্ঘজীবন যে পরার্থপর পরিচয় বহন করে, তা অন্য কোথাও মেলা ভার। মহানবী (সা.)–এর রাজনীতিতে এই বৈশিষ্ট্য ছিল সমুজ্জ্বল। ফলে তাঁর নিখাঁদ চরিত্রের প্রভাবকে শুধু রাজনৈতিক কার্যকলাপের দোহাই দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল না।

২। উপায়-উপকরণের পবিত্রতা: তিনি কোনো অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মতো উপায় অবলম্বন করে রাজনীতি করেননি। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশ পোষণ করতেন না। চরম শত্রুর সঙ্গেও মানবিক আচরণ করতেন। তারা ইসলামের আদর্শ মেনে নিলে তাদের আগের সব দোষ মাফ করে দিতেন।

৩. উদ্দেশ্যের নিষ্কলুষতা: ইসলামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা তাঁর ছিল কাম্য, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা নয়। না হলে তিনি কুরাইশের প্রস্তাব মেনে নেতৃত্ব গ্রহণ করে নিতে পারতেন।

এই তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য স্বার্থান্বেষী ও দুনিয়াদারদের রাজনীতি থেকে মহানবী (সা.)-কে পৃথক মর্যাদা দিয়েছে।

আরও পড়ুনহজরত শোয়াইব (আ.)–এর আবির্ভাব২০ আগস্ট ২০২৩

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

দীনে হককে আর সব দীনের ওপর বিজয়ী করা সংক্রান্ত যে দায়িত্বের কথা আল্লাহ–তাআলা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন, তার সবগুলো অবতীর্ণ হয়েছে মদিনায়। মদিনার সময়টি ছিল আল্লাহর বিধান প্রয়োগের সময়। মক্কার সময়টি মনন-মানসের প্রস্তুতিকাল।

৪০ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্তির মক্কায় যে সময়টুকু মহানবী (সা.) কাটিয়েছেন, তখন তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। জাগতিক উপায়-উপকরণ বলতেও তেমন কিছু তাঁর হাতে ছিল না। তাই তিনি প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তখন। হিজরতের পর ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।

আরও পড়ুনসুরা কাফে আল্লাহ বলেছেন মানুষ সৃষ্টির কারণ২০ আগস্ট ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত র র জন ত ক আল ল হ ইসল ম আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির উদ্বেগ আদালত অবমাননার শামিল: ইশরাক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে ইশরাক হোসেনের মামলা, রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তৎপরতা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টিকে আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, এনসিপি আইনের ব্যাখ্যা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে অবমাননা করেছে।

বুধবার রাতে এক প্রতিবাদলিপিতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে তাঁর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। এর আগে গতকাল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল এনসিপি।

দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়া নিয়ে এনসিপির উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে ইশরাক হোসেনের পক্ষে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির বিজ্ঞ আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তা ছাড়া ২০২০ সালে দায়ের করা মামলাটি ২০২৫ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এটি দীর্ঘ পাঁচ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যা মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয়; বরং মোকদ্দমাটি আরও আগেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল।

নির্বাচনী মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ে হওয়া উচিত উল্লেখ করে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এনসিপির এ জাতীয় বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সম্পূর্ণ আইনি অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মামলার তদবিরকারক বাদীর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কেউ হতে পারে বিধায় বিজ্ঞ আদালত হলফনামা গ্রহণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ আইন মেনেই করা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ করেননি বলে যে বক্তব্য এনসিপি দিয়েছে, তা এককথায় তাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ এবং আদালত অবমাননার শামিল।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আদালত যথাযথ আইন মেনেই রায় প্রদান করেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ন্যায়বিচার হয়নি বলে মনে করে, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে এবং তার বক্তব্য ওই উচ্চ আদালতে রাখারও সুযোগ আছে। এভাবে প্রেসনোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও বিজ্ঞ আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়।’

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতার ইশরাক হোসেনকে গত ২৭ মার্চ মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। এর এক মাস পর আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পর এটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে শপথ গ্রহণের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। তবে কবে নাগাদ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে, সে বিষয়টি নিয়ে এখন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

নির্বাচনের হিসাব অনুযায়ী আগামী ১৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ