ডিসি অফিসের কোটিপতি কেরানির বিরুদ্ধ দুদকের চার্জশিট
Published: 26th, February 2025 GMT
দুর্নীতির অভিযোগে মাদারীপুরের কোটিপতি কেরানি মো. মিজানুর রহমান ফকিরের (৫৩) বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে (জেলা ও দায়রা জজ আদালত) এ চার্জশিট দাখিল করেন।
মিজানুর রহমান ফকির মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক। এর আগে তিনি রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
মিজানুর রহমান ফকির মাদারীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠককান্দী এলাকার মো.
দুদকের দাখিল করা চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, আসামি মো. মিজানুর রহমান ফকির ৫৩ লাখ ২০ হাজার ৭৪৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া, আসামি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৭০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অসৎ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। অর্থাৎ, তার কোটি টাকার বেশি দামের সম্পদ রয়েছে।
দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, তদন্তকালে জব্দ করা আলামত ও রেকর্ডপত্র মোতাবেক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানতে পারে যে, আসামি মো. মিজানুর রহমান গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা করেছেন বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। গাড়ি ব্যবসা থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তিনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে গাড়ির ব্যবসা করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। গণকর্মচারী (আচরণ), ১৯৭৯ এর বিধি-১৭ ধারায় এ বিষয়ে বলা আছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে অথবা অন্য কোনো চাকরি বা কার্য করতে পারবেন না। তিনি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম-নীতি ও চাকরিকালীন বিধি-বিধান মানতে বাধ্য। তিনি সজ্ঞানে জেনে-বুঝে তা লঙ্ঘন করেছেন। তা দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৬৮ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
একইভাবে গণকর্মচারী আচরণ, ১৯৭৯-এর বিধি-১১ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অধিক মূল্যের কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে তাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধান বা সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। তিনি ১৯৭৯ এর বিধি-১২ ধারায় [ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি নির্মাণ অথবা ক্রয়] বলা আছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী আবেদনের মাধ্যমে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ ছাড়া ব্যবসায়িক বা আবাসিক ব্যবহারের অভিপ্রায়ে নিজে বা ডেভেলপারের দ্বারা কোনো ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি নির্মাণ করতে বা কিনতে পারবেন না। মিজানুর রহমান ফকির সজ্ঞানে তা লঙ্ঘন করেছেন। তাছাড়া, আসামি নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিপি/অর্পিত সম্পত্তি কেস নম্বর: ঢওও-ঠচ-১২৮/৭৩-৭৪ নং লিজ কেস মূলে ০.১৪০০ একর সরকারি (ভিপি) সম্পত্তি আইনবহির্ভূতভাবে বরাদ্দ নিয়ে ভোগদখলে রেখেছেন। ভিপি বা অর্পিত সম্পত্তি আইন মোতাবেক, যে শহরে লিজগ্রহীতার নিজস্ব বাড়ি বা জায়গা রয়েছে এবং তাকে ওই শহরের অর্পিত সম্পত্তির কোনো বাড়ি বা জায়গা লিজ দেওয়া যাবে না। আসামি সজ্ঞানে তা লঙ্ঘন করে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য ভিপি সম্পত্তি আইনবহির্ভূতভাবে লিজ নিয়ে বাউন্ডারি, দরজা, ঘর নির্মাণ করে ভোগদখলে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের স্মারক নং-৩১০৯৪ (তারিখ ২৪/০৮/২০২৩) মোতাবেক জেলা প্রশাসক, মাদারীপুরের স্মারক নং-১৭১ (তারিখ: ১৩/০৮/২০২৪) দ্বারা লিজ বাতিল করে দুদককে অবহিত করা হয়।
পারিপার্শ্বিক ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসামি আইন অমান্যকারী এবং সরকারি কর্মচারী হয়ে লাভের আশায় ব্যবসা ও অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করেছেন।
ঢাকা/বেলাল/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন অপর ধ ব যবস সরক র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।