Samakal:
2025-08-02@11:16:08 GMT

গান ও অভিনয়ের পারশা

Published: 27th, February 2025 GMT

গান ও অভিনয়ের পারশা

দর্শক-শ্রোতাকে চমকে দেওয়ার মন্ত্র ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলেছেন পারশা মাহজাবীন। না, কথাটা একদম বাড়িয়ে বলা হয়নি। প্রমাণ চাইলে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ঘুমপরী’ ওয়েব সিনেমাটি দেখে নিতে পারেন। তাহলেই বুঝে যাবেন উষা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কীভাবে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন পারশা। কারণ, এক বছর আগে ‘লাভ লাইন’ নাটকে দেখা অনন্যা চৌধুরীর সঙ্গে ‘ঘুমপরী’ সিনেমার উষাকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না। একই অবয়ব, তবু ভিন্ন দুই চরিত্র পারশাকে পর্দায় তুলে এনেছে দুইভাবে।

এ বিষয়ে কৃতিত্ব যতটা না নিজের, তার চেয়ে বেশি অবদান পরিচালক জাহিদ প্রীতমের বলে উল্লেখ করেন পারশা। একই সঙ্গে চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার বিষয়ে দুই সহশিল্পী প্রীতম হাসান ও তানজিন তিশার সহযোগিতার কথা বলতেও দ্বিধা করেন না এই অভিনেত্রী।

তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলায় থিয়েটার করেছি বলেই অভিনয় দারুণভাবে রপ্ত করা শিখেছি, বিষয়টা এমন না। সত্য এটিই, অভিনয়ে আমার তেমন কোনো শিক্ষা নেই। যতটুকু শেখার সুযোগ হয়েছে তা শুটিং সেটে পরিচালকের নির্দেশ মেনে আর সহশিল্পীদের দেওয়া সাহস ও সহযোগিতায়। ‘ঘুমপরী’ ওয়েব সিনেমায় অভিনয়ের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি।’’

পারশার এ কথা থেকে বোঝা গেল, কীভাবে পারশা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এত সহজে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছেন। তারপরও একটু খটকা লাগে এটি ভেবে, অভিনয় সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা কিংবা অভিনীত চরিত্র আত্মস্থ করে নেওয়ার চেষ্টা না থাকলে কীভাবে তা দর্শককে বিশ্বাস করানো যায়? 

সে প্রশ্ন করতেই পারশা জানালেন, ‘অভিনয়ের প্রতি ভালোলাগা ছোটবেলা থেকে। যদিও অভিনেত্রী হওয়ার বাসনায় নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ ততটা পাইনি, তবে নানা বিষয় ও ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, জীবনধারা, পরিবেশভেদে মানুষের চিন্তাধারা বদলে যাওয়া– এসব নিয়ে অনেক ভেবেছি। যার কিছু বিষয় আমার গানেও উঠে এসেছে। হয়তো এগুলোই আমার অভিনেত্রী সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। বাকি ছিল শুধু অভিজ্ঞতা; যা মডেলিং, গানের সঙ্গে পারফরম্যান্স এবং টিভি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে বেড়ে চলেছে।’ পারশার এ কথা থেকে বোঝার বাকি থাকে না, অভিনেত্রী হিসেবে দর্শক মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মন্ত্রটা তিনি কীভাবে রপ্ত করেছেন। 

অভিনয় ছেড়ে এবার প্রসঙ্গ গানের বিষয়ে। কারণ গানই পারশাকে বিনোদন দুনিয়ায় বড় পরিচিতি এনে দিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় তাঁর গাওয়া ‘ভুলে যাই আমি’ তরুণ এই শিল্পীর পরিচিতি দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই গানের আগে ও পরে আরও কিছু গান গেয়ে শ্রোতার মনে আনুরণ তুলে গেছেন তিনি।

এ কারণে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অভিনেত্রী পরিচয় গড়ে ওঠার কারণে কণ্ঠশিল্পী পারশা হারিয়ে যাবেন কিনা? এর উত্তরে পারশা হেসে বলেন, ‘একদমই না। গান গাওয়া, অভিনয়, ছবি আঁকাসহ যা কিছু ভালো লাগে সবই চালিয়ে যাব। খ্যাতির মোহে নয়, যেটাই করব, তার পেছনে লক্ষ্য থাকবে একটাই, দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো কিছু উপহার দেওয়া।’
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ