ফতুল্লায় কাস্টমস কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে ঝাড়ু মিছিল, মানববন্ধন
Published: 27th, February 2025 GMT
ফতুল্লার সস্তাপুর-কাঠেরপুলে মাদক, সন্ত্রাস ও নিরীহ মানুষের উপর নানা অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে মারুফ নামক এক কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে মানববন্ধন ও কাঠেরপুল এলাকায় কাস্টমস কর্মকর্তা মারুফের মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করে। অভিযুক্ত মারুফ ফতুল্লা থানার কাঠেরপুল এলাকার অবসরপ্রাপ্ত কাষ্টমস ড্রাইভার জামাল মিয়ার পুত্র। বর্তমানে সে সাভার ইপিজেডে কর্মরত রয়েছে বলে জানা যায়।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন যাবত কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে মারুফ ফতুল্লার সস্তাপুর, কাঠেরপুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের আসর ও বিক্রয় করে আসছে। প্রকাশ্যে মারুফের লোকজন মাদক বিক্রয়সহ নানাবিধ অপকর্ম করছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে মারুফ ও তার বাহিনীর কাছে নির্যাতিত হচ্ছে নিরীহ এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ডাইং কারখানার এক মালিক বলেন, মারুফ কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় বহন করে বিভিন্ন মিলে অহেতুক কাগজপত্রে ঝামেলা আছে বলে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পাশাপাশি জোরপূর্বক বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ঝুটসহ বিভিন্ন মালামাল নাম মাত্র মূল্য দিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে নেয়।
সে একজন মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টারদাতা। তার একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনীর মাধ্যমে সে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটায়। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলা রয়েছে । তার এই অপকর্মের প্রতিবাদে কুতুবআইল, সস্তাপুর ও কাঠেরপুল এলাকার সর্বস্তরের জনগণ ঝাড়ু নিয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হবুল,স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির আহবায়ক মো.
উল্লেখ্য, এরআগে গত মঙ্গলবার এলাকাবাসি কাস্টম কর্মকর্তা মারুফের মাদকের আস্তায় অভিযান চালায় এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল