রোজা শুরুর আগেই দাম বেড়েছে যেসব পণ্যের
Published: 28th, February 2025 GMT
পবিত্র রমজান সামনে রেখে বাজারে মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। বাড়তি রয়েছে লেবু, শসা ও বেগুনের দামও। তবে রোজার পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে পণ্যের দরদামের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজা শুরু হতে আর দুই থেকে তিন দিন বাকি রয়েছে। অন্যদিকে এখন মাসের শেষ সময়। এই দুই কারণে ভোক্তারা বেশি করে বাজার করছেন। বাড়তি চাহিদার কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। কারণ, চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম।
পরিচিত দোকানে এক সপ্তাহ আগে বলে রেখেও সয়াবিন তেল কিনতে পারিনি। পরে কয়েক দোকান ঘুরে এক লিটার তেল কিনতে পেরেছি।রাজধানীর মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা গৃহিণী ফারহানা ইয়াসমিনবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা ছিল। একইভাবে সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ২৮০-৩১০ টাকা হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার শুরুতে বেশি সংখ্যায় ক্রেতারা মুরগি কেনেন, এ কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা রয়েছে।
মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম সপ্তাহখানেক আগে কিছুটা কম ছিল। আর কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। গতকাল এক কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১০৫০-১১০০ টাকায়। অন্যদিকে চাষের চিংড়ি, কই, শিং, তেলাপিয়া, রুই ও পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারে আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির দাম আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। যেমন প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজা শুরু হতে আর দুই থেকে তিন দিন বাকি রয়েছে। অন্যদিকে এখন মাসের শেষ সময়। এই দুই কারণে ভোক্তারা বেশি করে বাজার করছেন। বাড়তি চাহিদার কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।রোজার পণ্যের যে অবস্থাসাধারণত রোজার সময় লেবু, বেগুন ও শসার চাহিদা বেশি থাকে। বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে সাধারণ মানের লেবুর হালি ছিল ২০-৪০ টাকা, যা গতকাল ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বড় লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০-৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে বেগুন ও শসার দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কম ছিল।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি, গুড় প্রভৃতি পণ্যের দাম। এ বছর রমজানের আগে সরকার খেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে; যার ফলে আমদানি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কম শুল্ক ও সরবরাহ বেশি থাকায় গত এক মাসের মধ্যে মানভেদে খেজুরের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। এক মাস আগের তুলনায় ছোলার দামও কেজিতে ১৫ টাকার মতো কমে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চিড়া, মুড়ি, গুড় প্রভৃতি পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি চিড়া ৭০-৮০ টাকা, আখের গুড় ১৪০-১৮০ টাকা, খেজুরের গুড় ২৫০-৩০০ টাকা ও মুড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম সপ্তাহখানেক আগে কিছুটা কম ছিল। আর কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে খাসির মাংসের দাম।এদিকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ–সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি। গতকাল ঢাকার তিনটি বাজার ঘুরে মাত্র কয়েকটি দোকানে স্বল্প পরিমাণে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। ভোক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রোজার আগে কম-বেশি দামে অন্যান্য পণ্য কিনতে পারলেও সয়াবিন তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। রাজধানীর মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা গৃহিণী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘পরিচিত দোকানে এক সপ্তাহ আগে বলে রেখেও সয়াবিন তেল কিনতে পারিনি। পরে কয়েক দোকান ঘুরে এক লিটার তেল কিনতে পেরেছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১০০ ট ক ৮০ ট ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’