একপাশে সাগর, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি। মাঝখানে দীর্ঘ সড়ক ধরে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কয়েক শ মানুষ। কে কার আগে গন্তব্যে পৌঁছাবেন সেই লক্ষ্যে ছুটছেন তাঁরা। দেশ-বিদেশের ৪০০ সাইক্লিস্ট নিয়ে আয়োজিত ‘মেরিন ড্রাইভ রেস ২০২৫’ ঘিরে আজ শুক্রবার সকালে এমনই দৃশ্য দেখা যায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে।

‘রাইড ফর গ্লোরি’ প্রতিপাদ্যে যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ছয়টি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন সাইক্লিস্টরা। প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন।

ভোর পাঁচটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন দেশ-বিদেশের সাইক্লিস্টরা। সকাল ছয়টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম। উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

পেশাদার ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা দরিয়ানগর (প্যারাসেইলিং পয়েন্ট) থেকে শুরু করে টেকনাফের জিরো পয়েন্ট হয়ে বে-ওয়াচ হোটেলের সম্মুখে এসে সাইক্লিং শেষ করেন। পেশাদার গ্রুপের ফিনিশিং টাইম ছিল ৩ ঘণ্টা। আবার অপেশাদার ক্যাটাগরির প্রতিযোগীরা প্যারাসেইলিং পয়েন্ট থেকে হোটেল বে-ওয়াচ, বালিয়াখালী কাঁকড়া বিচ হয়ে আবার হোটেল বে-ওয়াচে সম্মুখে এসে শেষ করেন সাইক্লিং। তাঁদের ফিনিশিং টাইম ছিল আড়াই ঘণ্টা।

সকাল ১০টায় মেরিন ড্রাইভের ইনানীতে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় তিনি বলেন, কক্সবাজার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের একটি জায়গা। মেরিন ড্রাইভে প্রথমবারের মতো মেরিন ড্রাইভ রেসের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দেশি-বিদেশি সাইক্লিস্টরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।

দেশ ও সুস্থ জাতি গঠনে এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আশা করি বাংলাদেশের যুবসমাজ প্রতিনিয়ত এই ধরনের শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকবে।’

প্রতিযোগীদের একজন তানহা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের এই রেস অসাধারণ। একপাশে সমুদ্র, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলাম টেরই পাইনি। নারীরা যেন এ ধরনের আয়োজনে বেশি অংশ নিতে পারেন সে লক্ষ্যে উদ্যোগ ও প্রচারণা দরকার।’

প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বেশ কয়েকজন বিদেশি। তাঁদের একজন ব্রাজিলের নাগরিক লরা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ খুবই আন্তরিক। তাঁদের সঙ্গে এত সুন্দর মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিং করা আনন্দের। কক্সবাজার খুবই সুন্দর।’

প্রতিযোগিতায় প্রফেশনাল (১৩-৪৪ বছর) ১১০ কিলোমিটারে নারী ও পুরুষ ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল ফাতেমা খাতুন ও মিজানুর রহমান। ৫৫ কিলোমিটারের অ্যামেচার ক্যাটাগরিতে (১৩-৪৪ বছর) সেরা হন ব্রাজিলের লরা ও সৈয়দ মুবিন। এ ছাড়া নারী-পুরুষ উভয় ক্যাটাগরিতে (১৩-৪৪ বছর বয়সী) প্রথম ১০ জনকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ