মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিস্টদের রোমাঞ্চকর সকাল
Published: 28th, February 2025 GMT
একপাশে সাগর, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি। মাঝখানে দীর্ঘ সড়ক ধরে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কয়েক শ মানুষ। কে কার আগে গন্তব্যে পৌঁছাবেন সেই লক্ষ্যে ছুটছেন তাঁরা। দেশ-বিদেশের ৪০০ সাইক্লিস্ট নিয়ে আয়োজিত ‘মেরিন ড্রাইভ রেস ২০২৫’ ঘিরে আজ শুক্রবার সকালে এমনই দৃশ্য দেখা যায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে।
‘রাইড ফর গ্লোরি’ প্রতিপাদ্যে যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ছয়টি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন সাইক্লিস্টরা। প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন।
ভোর পাঁচটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন দেশ-বিদেশের সাইক্লিস্টরা। সকাল ছয়টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম। উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
পেশাদার ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা দরিয়ানগর (প্যারাসেইলিং পয়েন্ট) থেকে শুরু করে টেকনাফের জিরো পয়েন্ট হয়ে বে-ওয়াচ হোটেলের সম্মুখে এসে সাইক্লিং শেষ করেন। পেশাদার গ্রুপের ফিনিশিং টাইম ছিল ৩ ঘণ্টা। আবার অপেশাদার ক্যাটাগরির প্রতিযোগীরা প্যারাসেইলিং পয়েন্ট থেকে হোটেল বে-ওয়াচ, বালিয়াখালী কাঁকড়া বিচ হয়ে আবার হোটেল বে-ওয়াচে সম্মুখে এসে শেষ করেন সাইক্লিং। তাঁদের ফিনিশিং টাইম ছিল আড়াই ঘণ্টা।
সকাল ১০টায় মেরিন ড্রাইভের ইনানীতে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় তিনি বলেন, কক্সবাজার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের একটি জায়গা। মেরিন ড্রাইভে প্রথমবারের মতো মেরিন ড্রাইভ রেসের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দেশি-বিদেশি সাইক্লিস্টরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।
দেশ ও সুস্থ জাতি গঠনে এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আশা করি বাংলাদেশের যুবসমাজ প্রতিনিয়ত এই ধরনের শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকবে।’
প্রতিযোগীদের একজন তানহা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের এই রেস অসাধারণ। একপাশে সমুদ্র, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলাম টেরই পাইনি। নারীরা যেন এ ধরনের আয়োজনে বেশি অংশ নিতে পারেন সে লক্ষ্যে উদ্যোগ ও প্রচারণা দরকার।’
প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বেশ কয়েকজন বিদেশি। তাঁদের একজন ব্রাজিলের নাগরিক লরা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ খুবই আন্তরিক। তাঁদের সঙ্গে এত সুন্দর মেরিন ড্রাইভে সাইক্লিং করা আনন্দের। কক্সবাজার খুবই সুন্দর।’
প্রতিযোগিতায় প্রফেশনাল (১৩-৪৪ বছর) ১১০ কিলোমিটারে নারী ও পুরুষ ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল ফাতেমা খাতুন ও মিজানুর রহমান। ৫৫ কিলোমিটারের অ্যামেচার ক্যাটাগরিতে (১৩-৪৪ বছর) সেরা হন ব্রাজিলের লরা ও সৈয়দ মুবিন। এ ছাড়া নারী-পুরুষ উভয় ক্যাটাগরিতে (১৩-৪৪ বছর বয়সী) প্রথম ১০ জনকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সেনাবাহিনী প্রধান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দর
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫