ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেও ব্যর্থ হওয়ার ৫ কারণ
Published: 2nd, March 2025 GMT
১. না বুঝে শুরু করা
‘ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় করা যায়’—শুনেই অনেকে এই পথে পা বাড়ান। কোনো রকম দক্ষতা ছাড়াই কাজে নেমে পড়েন। একবারও ভাবেন না, যে কাজটা করতে যাচ্ছি, সে বিষয়ে আমার আগ্রহ বা ‘প্যাশন’ আছে কি না। এরপর যখন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট করেও কাজ পান না, তখন হাল ছেড়ে দেন। বাস্তবতা হলো—একটা কাজে যদি আমার আগ্রহ না থাকে, তাতে যতই লাখ টাকার হাতছানি থাকুক না কেন, আমি খুব বেশি এগোতে পারব না। তাই হুজুগে ঝাঁপিয়ে না পড়ে আগে ভালোমতো খোঁজ নেওয়া দরকার।
২.দক্ষতার অভাব
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে আপনার নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ সব বিষয়েই দক্ষতা অর্জন করতে চান। এটাও ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ। সব বিষয়ে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং দু–একটি দক্ষতা আপনাকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। ধরা যাক আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান; গুগল বা ফেসবুকের বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করতে চান—তাহলে এই চর্চাটাই ভালোভাবে করুন। এই খাতের বিশেষজ্ঞ (এক্সপার্ট) হয়ে উঠতে চেষ্টা করুন। পাশাপাশি কনটেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), ওয়েব অ্যানালিটিকস, ই–মেইল মার্কেটিং—এসব বিষয়ে জ্ঞান রাখুন। শুধু কাজ পাওয়ার জন্য দক্ষতা দেখাতে চাইলে ক্লায়েন্টের আস্থা হারাতে পারেন।
আরও পড়ুনবাড়তি আয়ের জন্য এই ৫ দক্ষতা অর্জন যখন ইউটিউবেই সম্ভব২১ অক্টোবর ২০২৪৩. যথেষ্ট সময় না দেওয়াফ্রিল্যান্সিংকে অনেকেই খণ্ডকালীন বা ‘পার্টটাইম’ কাজ মনে করেন। আদতে কিন্তু তা নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা। এখানে সফল হতে হলে আপনাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কাজ খোঁজা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, কাজ সম্পন্ন করা—এই সবকিছুর জন্যই অনেক সময় প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন অল্প সময় দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব, তাহলে ভুল করছেন। ফ্রিল্যান্সিং মানে মুক্ত পেশা খাত, সেটা ঠিক। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সময়মতো ক্লায়েন্টের কাজ শেষ করতে হবে। সময় নিয়ে হেলাফেলা করলে কখনোই সফল হতে পারবেন না। কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন, প্রতিদিন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন।
৪. সঠিক মার্কেটিং ও আত্মবিশ্বাসের অভাবফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ পেতে হলে আপনাকে নিজের ‘মার্কেটিং’ করতে হবে, যাকে আমরা বলি ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কথা ক্লায়েন্টদের জানাতে হবে। নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকতে হবে, বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফাইবার, আপওয়ার্ক, লেজিট ইত্যাদি) প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আপনি যদি নিজের মার্কেটিং করতে না পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে। নিজের দক্ষতা ও কাজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় বা কাজ করার সময় যদি আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তাহলে আপনি ভালো ফল পাবেন না। তাই নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে বড় কাজে হাত দিন। প্রয়োজনে সফল ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিন।
আরও পড়ুনদেশে বসে বিদেশে চাকরি, কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ‘রিমোট জব’১৯ জানুয়ারি ২০২৫৫. ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের অভাবফ্রিল্যান্সিংয়ে শুরুটা কঠিন হতে পারে। প্রথম কাজ পেতে বা ক্লায়েন্টের আস্থা অর্জন করতে সময় লাগতে পারে। এই সময় আপনাকে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি সহজে হাল ছেড়ে দেন, তাহলে সফল হওয়া কঠিন। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একদম হাল ছেড়ে দেওয়ার আগমুহূর্তে কাজ পেয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক সময় চটকদার বিজ্ঞাপন আমাদের ভুল ধারণা দেয়। আমরা ভাবি, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুললেই আয় করা যায়। আদতে তা নয়। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিন এবং উন্নতি করার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ