১. না বুঝে শুরু করা

‘ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় করা যায়’—শুনেই অনেকে এই পথে পা বাড়ান। কোনো রকম দক্ষতা ছাড়াই কাজে নেমে পড়েন। একবারও ভাবেন না, যে কাজটা করতে যাচ্ছি, সে বিষয়ে আমার আগ্রহ বা ‘প্যাশন’ আছে কি না। এরপর যখন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট করেও কাজ পান না, তখন হাল ছেড়ে দেন। বাস্তবতা হলো—একটা কাজে যদি আমার আগ্রহ না থাকে, তাতে যতই লাখ টাকার হাতছানি থাকুক না কেন, আমি খুব বেশি এগোতে পারব না। তাই হুজুগে ঝাঁপিয়ে না পড়ে আগে ভালোমতো খোঁজ নেওয়া দরকার।

২.

দক্ষতার অভাব

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে আপনার নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ সব বিষয়েই দক্ষতা অর্জন করতে চান। এটাও ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ। সব বিষয়ে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং দু–একটি দক্ষতা আপনাকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। ধরা যাক আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান; গুগল বা ফেসবুকের বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করতে চান—তাহলে এই চর্চাটাই ভালোভাবে করুন। এই খাতের বিশেষজ্ঞ (এক্সপার্ট) হয়ে উঠতে চেষ্টা করুন। পাশাপাশি কনটেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), ওয়েব অ্যানালিটিকস, ই–মেইল মার্কেটিং—এসব বিষয়ে জ্ঞান রাখুন। শুধু কাজ পাওয়ার জন্য দক্ষতা দেখাতে চাইলে ক্লায়েন্টের আস্থা হারাতে পারেন।

আরও পড়ুনবাড়তি আয়ের জন্য এই ৫ দক্ষতা অর্জন যখন ইউটিউবেই সম্ভব২১ অক্টোবর ২০২৪৩. যথেষ্ট সময় না দেওয়া

ফ্রিল্যান্সিংকে অনেকেই খণ্ডকালীন বা ‘পার্টটাইম’ কাজ মনে করেন। আদতে কিন্তু তা নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা। এখানে সফল হতে হলে আপনাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কাজ খোঁজা, ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, কাজ সম্পন্ন করা—এই সবকিছুর জন্যই অনেক সময় প্রয়োজন। আপনি যদি মনে করেন অল্প সময় দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব, তাহলে ভুল করছেন। ফ্রিল্যান্সিং মানে মুক্ত পেশা খাত, সেটা ঠিক। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সময়মতো ক্লায়েন্টের কাজ শেষ করতে হবে। সময় নিয়ে হেলাফেলা করলে কখনোই সফল হতে পারবেন না। কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন, প্রতিদিন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন।

৪. সঠিক মার্কেটিং ও আত্মবিশ্বাসের অভাব

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ পেতে হলে আপনাকে নিজের ‘মার্কেটিং’ করতে হবে, যাকে আমরা বলি ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কথা ক্লায়েন্টদের জানাতে হবে। নিজের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকতে হবে, বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফাইবার, আপওয়ার্ক, লেজিট ইত্যাদি) প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আপনি যদি নিজের মার্কেটিং করতে না পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে। নিজের দক্ষতা ও কাজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় বা কাজ করার সময় যদি আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তাহলে আপনি ভালো ফল পাবেন না। তাই নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে বড় কাজে হাত দিন। প্রয়োজনে সফল ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিন।

আরও পড়ুনদেশে বসে বিদেশে চাকরি, কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ‘রিমোট জব’১৯ জানুয়ারি ২০২৫৫. ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের অভাব

ফ্রিল্যান্সিংয়ে শুরুটা কঠিন হতে পারে। প্রথম কাজ পেতে বা ক্লায়েন্টের আস্থা অর্জন করতে সময় লাগতে পারে। এই সময় আপনাকে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি সহজে হাল ছেড়ে দেন, তাহলে সফল হওয়া কঠিন। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একদম হাল ছেড়ে দেওয়ার আগমুহূর্তে কাজ পেয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক সময় চটকদার বিজ্ঞাপন আমাদের ভুল ধারণা দেয়। আমরা ভাবি, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুললেই আয় করা যায়। আদতে তা নয়। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিন এবং উন্নতি করার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ