নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ এবং একটি স্থলবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ৮টি স্থলবন্দর কার্যকর/অকার্যকরের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত যাচাই কমিটি এ সুপারিশ করেছে।

রবিবার (২ মার্চ) পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানোর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়।

৮টি স্থলবন্দর হলো 
১.

নাকুগাঁও স্থলবন্দর, নালিতাবাড়ি, শেরপুর। 
২. গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। 
৩. ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর, বকশিগঞ্জ, জামালপুর। 
৪. বাল্লা স্থলবন্দর, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ। 
৫. বিরল স্থলবন্দর, বিরল, দিনাজপুর। 
৬. চিলাহাটি স্থলবন্দর, ডোমার, নীলফামারী। 
৭. দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর, জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা। 
৮. তেগামুখ স্থলবন্দর, বরকল, রাঙ্গামাটি।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজার সৈকতে নেমে অসুস্থ পর্যটক, হাসপাতালের পথে মৃত্যু

কক্সবাজার সৈকতে খুলনার সাবেক কাউন্সিলরকে গুলি করে হত্যা

জানা গেছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বিগত সরকারের আমলে নির্মিত দেশের অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন বিভিন্ন স্থলবন্দরসমূহের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

এর পরিপরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আটটি অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দর কার্যকর/অকার্যকর এর বিষয়ে যাচাইয়ের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

উক্ত কমিটি কর্তৃক বর্ণিত ৮টি স্থলবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শন, প্রাপ্ত তথ্য, আনুসঙ্গিক সুবিধা ও অসুবিধা, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কিনা এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। উক্ত প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনায় নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি স্থলবন্দর,  চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার তেগামুখ স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন নেই মর্মে সুপারিশ প্রদান করেছে।

এছাড়া কমিটি হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কেদারকোটে নির্মিত স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে কোন অবকাঠামো ও সড়ক না থাকায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, সেহেতু বাল্লা স্থলবন্দরের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা যেতে পারে মর্মে সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের দুটি স্থানের পরিবর্তে একটি স্থানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার সুপারিশ করেছে।

শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরে বন্দরকেন্দ্রিক গতিশীল অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলমান আছে। বিগত সময়ের আয়-ব্যয় অনুপাত তুলনায় লাভজনক বিবেচনায় স্থলবন্দরটির কার্যক্রম আরো গতিশীল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং পূর্বে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গতিশীল ছিল  ও বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম দৃশ্যমান।এ বিনিয়োগ বিবেচনায় ন্যূনতম জনবল দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে। এছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেল পথে আমদানি-রপ্তানি চালু রাখা যেতে পারে।

এছাড়া ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর জন্য ভারতকে অনুরোধ করা যেতে পারে। বিওটি ভিত্তিক পরিচালনার চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ স্থলবন্দরে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে ভারত কর্তৃক সড়ক নির্মাণ এবং স্থলরুট হিসেবে ঘোষণা করলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পোর্ট অপারেটরকে বলা যেতে পারে মর্মে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প র শ কর অবক ঠ ম ক র যকর কর ত ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
  • বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা