কিস্তি না পেয়ে ছাগল নিয়ে গেলেন সংস্থার কর্মী
Published: 2nd, March 2025 GMT
দুই দিন কিস্তি না পেয়ে এক নারীর বাড়ি থেকে তার ছাগল নিয়ে গেলেন রাজশাহীর একটি সংস্থার একজন কর্মী।
রবিবার (২ মার্চ) সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে এলাকায় জানাজানি হলে ছাগলটি ফেরত দিতে বাধ্য হয় জনকল্যাণ মানব উন্নয়ন সংস্থা নামের ওই সংস্থাটি।
নগরের টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এই সংস্থার কার্যালয়। সংস্থাটি এলাকার দুঃস্থ মানুষের মাঝে ঋণ দিচ্ছে। ফাতেমা বেগম নামের এক নারী ঋণ নেওয়ার পর দুইদিন কিস্তি দিতে না পারলে তার বাড়ি থেকে একটি ছাগল নিয়ে যান ওই সংস্থার মাঠকর্মী।
নগরের তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম জানান, তিনি নগরের হাদির মোড়ে সবজি বিক্রি করেন। এই ব্যবসার জন্য ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে চার হাজার টাকা শোধ করেছেন। সম্প্রতি দুর্ঘটনায় তিনি কোমরে আঘাত পেয়েছেন। ব্যবসা করতে পারছেন না। তাই দুটি কিস্তি দিতে পারেননি। তাই তার বাড়ি থেকে ছাগল নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি জানান, রবিবার সেহরি খেয়ে ও নামাজ পড়ে তিনি পাশে বোনের বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। সকালে ওই সংস্থার মাঠকর্মী কিস্তি আদায়ে তার বাড়ি যান। তাকে না পেয়ে বাড়িতে বেঁধে রাখা একটি ছাগল ধরে নিয়ে চলে যান সংস্থার ওই কর্মী। যদিও ছাগলটি তার নিজের না। রিসা বেগম নামের এক নারী এই ছাগলটি তিনি আধাআধি হিসেবে পুষতেন।
রবিবার বেলা ১২টার দিকে ওই সংস্থার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ছাগল ফেরত নিতে ফাতেমা সংস্থার কার্যালয়ের সামনে এসেছেন। ছুটে এসেছেন ছাগলের আসল মালিক রিসা বেগমও। ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সংস্থাটির কোনো সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই।
রিসা বেগম এসে তুমুল বাগবিতণ্ডা শুরু করেন সংস্থার কর্মকর্তা নাসিরুল্লাহ কবীরের সঙ্গে। পরে ওই ছাগল রিসা বেগমকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ছাগল হাতে নিয়ে হাঁটা শুরু করে রিসা বেগম বলতে থাকেন, ‘‘সুদ খাওয়ার কারবার করছেন তো, আল্লাহই দিবে।’’
স্থানীয়রা জানান, সংস্থাটি দুই বছর থেকে ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু সংস্থার মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির কোনো নিবন্ধন নেই। সংস্থাটি চলছে শুধুমাত্র সমবায় সমিতির ছাড়পত্র দিয়ে। তারা এলাকার মানুষকে ঋণের ফাঁদে ফেলে চড়া সুদ আদায় করছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে সংস্থার কর্মকর্তা নাসিরুল্লাহ কবীর কোনো সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। ছাগল নিয়ে আসার ব্যাপারেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
রাজশাহী জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন ইসলাম বলেন, “জনকল্যাণ মানব উন্নয়ন সংস্থা নামে তাদের নিবন্ধন দেওয়া কোনো সংস্থা আছে কি না তা দেখে বলতে পারব।”
কিস্তি দিতে না পারায় ছাগল আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করতে পারেন।”
ঢাকা/কেয়া/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ওই স স থ এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫