মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় দুই দপ্তরের টানাপোড়েনে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। টেন্ডার আহ্বান করা হলেও এলজিইডির প্রকৌশলীর বাধায় সেতু নির্মাণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার।
জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের ওপর ৯টি সেতু নির্মাণের অনুমোদন পায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস (পিআইও)। অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে দরগ্রাম ইউনিয়নের রৌহা বাকপাড়া সড়কের খালের ওপর একটি নতুন সেতু হবে। সেখানে ৪০ বছরের পুরোনো একটি সরু সেতু রয়েছে। সেই পরিত্যক্ত সেতু নিলাম করে অপসারণের জন্য মৌখিকভাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তাকে বলা হলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। সেতুটি অপসারণ না করায় নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এলজিইডি কর্মকর্তা ইমরুল হোসেনের দাবি, সড়কটি তাদের। যার কোড নম্বর ৪০৬৪। এ সড়কের মধ্যে বা খালের ওপর সেতু নির্মাণ করবে এলজিইডি বিভাগ।
সেতুর পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে বাকপাড়া খালের ওপর একটি সরু সেতু নির্মাণ করা হয়। সেটির এখন ভগ্নদশা। সেতুর চারদিকে রেলিংসহ পাটাতন ভেঙে গেছে। সেতুতে বড় বড় গর্ত হয়েছে। এ ছাড়া সেতুর দুই পাশ থেকে দুটি ভ্যান গাড়ি উঠে এলে পার হতে পারে না। সেতুটি সরু হওয়ায় এই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তিনি শুনেছেন এখানে নতুন সেতু হবে কিন্তু সেটার কাজ নাকি বন্ধ করে দিয়েছেন এলজিইডি কর্মকর্তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, ডিএস, সিএস, এসএ ও আরএস পর্চায় সড়কের মালিক পিআইও। ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ সড়কে রক্ষণাবেক্ষণ করেন তারা। এ ছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক রেজুলেশনে তারা যে কোনো সড়কের ওপর সেতু নির্মাণ 
করতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এলজিইডি কর্মকর্তা কেন সেতু নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন, তা তিনি জানেন না। মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউএনওর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বলে জানান তিনি। 
খলিলুর আরও বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করতে না পেরে সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ ২০২৬ এর ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়। এ সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা না হলে বরাদ্দ ২৭ লাখ ৮০ হাজার ২৫২ টাকা ফেরত যাবে। ফলে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে এলাকাবাসী। বাকপাড়া খালের ওপর একটি সরু সেতু রয়েছে। তা নিলামের মাধ্যমে অপসারণ করতে বলা হলেও এলজিইডি বিভাগ কর্ণপাত করছে না। উল্টো ওই সড়ক তারা নিজেদের বলে দাবি করছে। ফলে সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগেই রৌহা গ্রামের বাকপাড়া সড়কটিতে এলজিইডির কোড নম্বর পড়েছে। ফলে এই সড়কে যা উন্নয়ন করা হবে, তা এলজিইডি বিভাগ করবে। বাকপাড়া খালের ওপর নতুন সেতু নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করবে এলজিইডি বিভাগ। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কীভাবে দরপত্র আহ্বান করে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যে রেজুলেশন দেখিয়েছেন, তার মেয়াদ পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। তিনি সেই রেজুলেশন দেখিয়ে কীভাবে সেতু নির্মাণের দাবি করেন।
সাটুরিয়ার দরগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আলীনূর বকস রতন বলেন, রৌহা গ্রামের বাকপাড়া খালের ওপর সরু সেতুটি মানুষের কোনো উপকারে আসে না। এই সেতু দিয়ে দুটি রিকশাভ্যান পাশাপাশি চলতে পারে না। এলজিইডির বাধার কারণে নতুন সেতুর  নির্মাণকাজও করতে পারছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফৌজদার এন্টারপ্রাইজ। সেতুটি নির্মাণ না হলে কয়েক হাজার মানুষের ভোগান্তির অবসান হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি পিআইও ও এলজিইডি অফিসকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করে সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর খ ল র ওপর কর মকর ত ন বল ন র জন য র একট সড়ক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: নাহিদের জবানবন্দি পেশ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি পেশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জবানবন্দি পেশ শেষ করেন নাহিদ। তিনি গতকাল জবানবন্দি পেশ শুরু করেন।

আরো পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন নাহিদ ইসলাম

মালয়েশিয়া যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম

আজ বিকেলে তাকে জেরা করবেন এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

এ মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে আজ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। 

উক্ত মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। 

একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। পরবর্তীকালে এ মামলার ৩৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।খবর বাসসের।

এ মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরো দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ