২০ সেকেন্ডের রিলসে পুরো ব্যাপারটি বেশ মজা করেই তুলে ধরেছে নিউজিল্যান্ড দলের মিডিয়া ম্যানেজার। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হয় রাত ৮টা ১৫ মিনিটে। স্টেডিয়ামেই ডিনার, রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। হোটেল ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে এয়ারপোর্টে যেতে যেতে রাত ১২টা ৫০ মিনিট। প্লেনের বোর্ডিং পাস নিতে তখন রাত ১টা ১৫ মিনিট। লাহোরে ল্যান্ড সকাল ৭টা ৪০ মিনিট। হোটেল ফিরতেই সকাল ৮টা ৩০ মিনিট। দু’দেশ বদলিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টার যাত্রা সম্পন্ন করে দুবাই থেকে লাহোরে সেমিফাইনাল খেলতে এসেছে নিউজিল্যান্ড। 

শরীরের ওপর কতটা ধকল গেছে রিলসে সেটাই বোঝাতে চেয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অবশ্য তাদের চেয়েও এই দৌড়াদৌড়িটা বেশি করতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে করাচি থেকে তাদের রওনা দিতে হয়েছে দুবাইয়ের পথে। সেখানে এক দিন অপেক্ষার পর ফের দুবাই থেকে লাহোরে যেতে হয়েছে। ‘জার্নি বাই প্লেন’র এই ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে দু’দল আজ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

আসলে হাইব্রিড মডেলের শর্ত মেনেই তাদের এই হুড়োহুড়িতে পড়তে হয়েছে। ভারত পাকিস্তানে গিয়ে না খেলায় সে দিন ইংল্যান্ড ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দু’দলকেই দুবাই যেতে হয়। সেদিন নিউজিল্যান্ড ভারতের বিপক্ষে জিতলে দুবাই থেকে যেত দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘দুবাই থেকে আমাদের লাহোরে ফিরে আসার জোর সম্ভাবনা ছিল। এতটা ভ্রমণ শরীরের জন্য আদর্শিক নয়। তবে আমরা দুবাইয়ে অন্তত কিছু ঘুরেফিরে বেরিয়েছি। এটা আমাদের জানাই ছিল, কোনো এক দলের হয়তো ফিরে আসতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদেরই ভ্রমণ করতে হয়েছে বেশি।’ 

দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার ক্লাসেন আক্ষেপ ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই ঘোরাঘুরির জন্য তাদের কোনো অভিযোগ নেই। দু’দিনে তাদের অন্তত ১৮ ঘণ্টা হোটেল টু মাঠ, মাঠ টু এয়ারপোর্ট করতে হয়েছে। পাকিস্তানে নিরাপত্তার কারণেই তারা হোটেল থেকে শপিংমল বা অন্য কোনো জায়গায় বেরোতে পারেননি। সেই সুযোগ দুবাইতে গিয়ে কাজে লাগিয়েছে প্রোটিয়ারা। নিউজিল্যান্ড দলকেও করাচি দুবাই করতে হয়েছে। তারও এক প্রকার মেনে নিয়েছেন আকাশ ভ্রমণের ক্লান্তি। 

‘এটা এমন একটা ব্যাপার, যা কিনা আমাদের হাতে নেই। সুতরাং এ নিয়ে আমরা ভাবছিও না। আমাদের সব ফোকাস এখন সেমিফাইনাল ম্যাচ ঘিরে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ