পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক নির্বাহী পরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার দিনভর সংস্থাটিতে বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে বেলা তিনটার পর বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অপর তিন কমিশনারকে সেনা নিরাপত্তায় কার্যালয় থেকে বের করা হয়। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা ধরে এ পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল।

দিনভর নানা দাবিতে বিক্ষোভের পর বিকেলে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিএসইসির বর্তমান কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পুরো কমিশন পদত্যাগ না করলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ের নিচতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, রিপণ কুমার দেবনাথ, পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মজুমদার, অতিরিক্ত পরিচালক লুৎফুল কবির, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশিদুল আলম প্রমুখ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বিএসইসিতে গতকাল দিনভর ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা আজ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে তুলে ধরবে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে একটি দল। এর ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

গত মঙ্গলবার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ওই দিনই এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। চাকরির বয়সসীমা ২৫ বছর হওয়ায় সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৪ দফা দাবি নিয়ে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের কাছে যান। এ সময় চেয়ার‌ম্যানের নেতৃত্বে কমিশন বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সভা করছিলেন। ওই সভাকক্ষেই হাজির হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ প্রত্যাহার; তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশনের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার ও শোকজ বন্ধ করা; কমিশনের ১২৭ কর্মী নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে উত্থাপিত বিষয়ে কমিশন থেকে আইনজীবী নিয়োগ ও তিন দিনের মধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে আপিল করা এবং কমিশনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন ও অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা। এসব দাবি পূরণ না করলে কমিশনের পদত্যাগেরও দাবি জানানো হয়।

এর আগে চেয়ারম্যানের কক্ষসহ কমিশন ফ্লোরের সব সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিএসইসি ভবনের মূল ফটকও ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ফ্লোরের ফটক। একপর্যায়ে বন্ধ করা হয় পুরো ভবনের বিদ্যুতের সংযোগও। খবর পেয়ে বেলা দেড়টার দিকে একদল পুলিশ এসে ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফেরত যায়। ততক্ষণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভে কমিশনের অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার খবর সংবাদমাধ্যমসহ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় বেলা দুইটার পর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেনাসদস্যরা নিরাপত্তাকর্মীদের ফটক খোলার অনুরোধ করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে সেনাসদস্যদের বহনকারী আরও কয়েকটি গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। প্রায় ৩০ মিনিট ফটকের বাইরে অপেক্ষার পর সেনাসদস্যদের কয়েকজন ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মীদের খুঁজে বের করে প্রবেশপথ খোলা ও লিফট চালুর ব্যবস্থা করেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একদল সদস্য জরুরি নির্গমন পথ দিয়ে পঞ্চম তলায় কমিশন ফ্লোরে প্রবেশ করেন এবং সভাকক্ষ থেকে চেয়ারম্যানসহ তিন কমিশনারকে তাঁদের জিম্মায় নেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন বলে দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে কার্যালয় থেকে বের করার পর সংস্থাটির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা চার দফা দাবি নিয়ে কমিশনে গিয়েছিলাম। কমিশন দাবি পূরণ করেনি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমিশনের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন, রাকিবুর রহমান, আরিফুল ইসলাম ও সুলতানা সালাউদ্দিন এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেতাব ও ইলেকট্রিশিয়ান মাহবুব। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিএসইসির ব্যাখ্যা

গতকালের ঘটনা সম্পর্কে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিগত দিনের পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধানে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত সাতটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাজার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কমিশনের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে মঙ্গলবার অবসরে পাঠানো হয়। এসব ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সভা চলাকালে সভাকক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক অবরুদ্ধ করেন। তাঁরা চার ঘণ্টা উচ্ছৃঙ্খল ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বাজার–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ

পুঁজিবাজারের মতো সংবেদনশীল একটি বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের ঘটনা বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি করেছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবিদাওয়া আদায়ে যে পথ বেছে নিয়েছেন, সেটি কোনো সরকারি কার্যালয়ে সমর্থনযোগ্য নয়। কর্মীরা কেন এ পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন, এ ক্ষেত্রে কারও কোনো ব্যর্থতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তারাও এ ঘটনায় উদ্বেগ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত পর স থ ত র রহম ন ল ইসল ম পদত য গ স ন সদস ক অবসর র পর স র কর ম ত কর ম তদন ত এ সময় গতক ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

তত্ত্বাবধায়ক সরকারযুক্ত সংবিধানই জনগণ চায়

ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত হয়েছিল সংবিধানে, তা–ই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল–পরবর্তী নির্বাচনগুলোর চিত্র দেখিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে—দেশের জনগণ এমন বিতর্কিত কোনো নির্বাচন হোক, তা চায় না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ রোববার ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিএনপি মহাসচিবের আপিল–সংক্রান্ত শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন।

সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে মাঝে বিরতি দিয়ে ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিন রাখা হয়েছে। এদিন বিরতির পর শুনানি শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে আসেন বাংলাদেশে সফররত নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে বসে এই শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই একটি আলোচিত বিষয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে যুক্ত করেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছর পর সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

ওই রায়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও আপিল বিভাগের রুলসের ব্যত্যয় ঘটেছে দাবি করে শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রায়ে সইয়ের আগেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংবিধান সংশোধন (পঞ্চদশ সংশোধনী) করে। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা ও স্বাক্ষরের (বিচারপতিদের রায়ে সই করা) আগে সরকার সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের বলে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে, যা দেশবাসীর জানা। দেশের বিবেকবান মানুষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে এই সংবিধান সংশোধনকে সরকারের হীন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল। এটি জনগণের বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।’

বিএনপির একসময়ের আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করেছেন। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার লক্ষ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি (বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) দেশের প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রুলস যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সর্বশেষ (পূর্ণাঙ্গ রায়) রায় দেন, যা প্রথমে দেওয়া রায়ের (শর্ট অর্ডার সংক্ষিপ্ত রায়) সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’

শুনানিতে অবসরের পর রায়ে সই প্রসঙ্গ

অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করলে তার আইনগত মূল্য কী হবে—এ প্রসঙ্গ ওঠে শুনানিতে। বিরতির পর শুনানিতে অংশ নিয়ে এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিবের অপর আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, রায় ঘোষণা ও রায়ে সই করা দুটি ভিন্ন বিষয়। রায় ঘোষণার সময় এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদে আসীন ছিলেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে যা ছিল, পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

দেওয়ানি কার্যবিধি, আপিল বিভাগের রুলস ও সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘শর্ট অর্ডারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ে যে পার্থক্য, তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন একজন বিচারপতি। এই বিচারপতিও বলেননি অবসরের পরে বিচারপতি খায়রুল হকের লেখা রায়টি অবৈধ হয়েছে। স্বাক্ষর পরে করেছেন বলে রায় অবৈধ বলা যাবে না। কারণ, অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করতে পারবেন না কিংবা কত দিনের মধ্যে সই না করলে সেটি অবৈধ হবে, এমন বাধ্যবাধকতা আইনে নেই।’

রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রকাশ্য আদালতে কোনো বিচারপতি যখন কোনো রায় দেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে দিলে ছোটখাটো দাড়ি, কমা, শব্দ বাদ পড়েছে—এগুলো ছাড়া যেকোনো পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই সেটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) ছাড়া হবে না, যার ওপর শুনানি চলছে।’

এ মামলায় সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়। ওই প্রসঙ্গে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, ‘অবসরের পর রায়ে সই করলে তা বাতিল বা অকার্যকর হবে না। যেদিন প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করলেন, সেই তারিখ হচ্ছে মূল। এটি হচ্ছে রায়ের তারিখ। কবে সই করলেন, এটি প্রাসঙ্গিক নয়। আপিল বিভাগের রুলসে বলা আছে, এ ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির (সিপিসি) বিধান কার্যকর হবে না। আপিল বিভাগের জন্য সিপিসি প্রযোজ্য নয়।’

মামলার পূর্বাপর

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আপিল বিভাগের ২০১১ সালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।

রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।

পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আপিল বিভাগের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করলেন নেপালের প্রধান বিচারপতি
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারযুক্ত সংবিধানই জনগণ চায়
  • বিশ্ব শিক্ষক দিবস: রাবিতে ৩ অধ্যাপককে সম্মাননা
  • টি-টোয়েন্টি থেকে উইলিয়ামসনের অবসরের ঘোষণা
  • ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টানলেন মুজিবুর রহমান