আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কারো অভিযান চালানোর অধিকার নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 6th, March 2025 GMT
কোথাও কোনো অভিযান চালাতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফারইস্ট ভবনে টুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে দেশে পুলিশ, বিদেশি নাগরিক, সাধারণ মানুষ বাসা বাড়িতেও মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছে, গত ৬ মাসেও এটা নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এটা নিয়ে দ্বিমত করবো না। যেসব জায়গায় হচ্ছে সেটা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলেই সাথে সাথে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণ যদি উশৃঙ্খল হয়ে যায় তাহলে কিন্তু সমস্যা হয়। বাহিনী দিয়ে তো সব সময় কন্ট্রোল করা যায় না।
এসব ঘটনায় গণমাধ্যমকে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। যখন কোনো ঘটনা হচ্ছে সাথে সাথে আমাদের বাহিনী চলে যাচ্ছে, অপরাধীদের আইের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ছাত্রজনতা চাইলেই কোথাও কোনো অভিযান চালাতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোথাও কোনো অভিযান চালতে হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই।
হাইওয়েতে রাতে গাছ ফেলে ডাকাতি হচ্ছে সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আসন্ন ঈদ ঘিরে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেজন্য কোনো ব্যবস্থা নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে ঈদ তখন যেন সড়কে চাঁদাবাজি, ছিনতাই না হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের কোনো কোনো স্থান রেড জোন, এরকম কোনো স্পট চিহ্নিত করেছেন কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, না, আমি দেখেছি ঢাকা- রাজশাহী জোন ও টাঙ্গাইল জোনে এ ঘটনাটা বেশি হচ্ছে। সেটা যেন না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা আগের থেকে আরও বেশি তৎপর থাকে, সে অনুযায়ী তারা অনেক তৎপর রয়েছেও।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র স জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।