ঢামেকে যৌথবাহিনীর অভিযান, ৩৩ ‘দালালকে’ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
Published: 6th, March 2025 GMT
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির ঘটনায় অর্ধশতাধিক ‘দালালকে’ আটক করেছে যৌথবাহিনী। এর মধ্যে নারী-পুরুষ মিলে ৩৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থ জরিমানা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের গোপন তথ্য ও নজরদারিতে এই যৌথ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন জাহান।
এ সময় হাসপাতাল চত্বর, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নারী সদস্যসহ এই দালাল চক্রকে আটক করে। যারা বিভিন্ন কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছিল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার পর আজ যৌথ অভিযান চালানো হয়। এতে অর্ধশতাধিক দালালকে আটক করা হয়েছে। সবার নাম পরিচয় ও সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর নারী-পুরুষ মিলে মোট ৩৩ জনকে সর্বোচ্চ ৩ মাসসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, হাসপাতালে কিছু দালাল কাজটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। দালালির কাজে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও পুনরায় তারা ছাড়া পেয়ে এই হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে থাকে। হাসপাতালে আশপাশে কিছু সংখ্যক লোক বসবাস করে। এই কিছুসংখ্যক মানুষ হাসপাতালে এসে রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করে থাকে। এর আগেও তাদের অভিযানে ধরা হয়েছিল। সেসব অভিযানে তাদের শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা বেরিয়ে পুনরায় হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে তাদের দালালি কাজ অব্যাহত রাখে, এতে বোঝা গেল তারা এই দালালি কাজটা পেশা হিসেবে নিয়েছে। এদের নির্মূলে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
পরিচালক আরো বলেন, আজকে এই দালাল নির্মূলে এনএসআই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে এই অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমর্থন আছে। অভিযানে আটক কয়েকজনকে যাচাই-বাছাই করে ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢামেক পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন ও স্থায়ী দু-একজন এসব কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। আমরা আজকে দৈনিক মজুরিতে যারা দালালি কাজে জড়িত প্রমাণ পাব, তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা পারমানেন্ট স্টাফ আছে দু-একজন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরেও এমন অভিযানে ২১ জনকে আটক করেছিল যৌথবাহিনী। তাদেরও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে