বগুড়ায় হাট ইজারায় দরপত্র দাখিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে, হাতাহাতি
Published: 6th, March 2025 GMT
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় হাটবাজারের ইজারার দরপত্র দাখিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার দরপত্র দাখিলের শেষ দিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে দরপত্র দাখিল ঘিরে সাধারণ ইজারাদারদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দরপত্র দাখিল কার্যক্রম স্থগিত করে প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত (বাংলা ১৪৩২ সন) এক বছরের জন্য উপজেলার বালুয়া, কাঁচারী, পাকুল্যা, চরপাড়া, করমজা, ভেলুরপাড়া ও হরিখালি—এই সাতটি হাটবাজার ইজারা দিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রশাসন। ঘোষিত শিডিউল অনুযায়ী, আজ বেলা একটা পর্যন্ত প্রথম দফা দরপত্র দাখিলের নির্ধারিত দিন ছিল। এরপর ২০ মার্চ দ্বিতীয় দফা ও ১০ এপ্রিল তৃতীয় দফা দরপত্র দাখিলের দিন ধার্য আছে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বাধায় দরপত্র কিনেও উপজেলা প্রশাসন চত্বরে রাখা নির্ধারিত বাক্সে ফেলতে পারেননি বলে অভিযোগ সাধারণ ইজারাদারদের।
ইজারা নিতে আগ্রহী এমন কয়েকজন বলেন, আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে দরপত্র দাখিলের সময়সীমা ছিল। সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন বিএনপি ও যুবদলের নেতারা। পাকুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম দরপত্র দাখিল করতে গেলে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মিজানুর রহমান, বালুয়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালাম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পাভেল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাজু আহমেদের নেতৃত্বে বাধা দেওয়া হয়। তখন উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে নেতাদের হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা হাটবাজার ইজারা কমিটি মৌখিকভাবে দরপত্র দাখিল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, হাটবাজার ইজারার দরপত্র ফেলতে যাওয়া ব্যক্তিদের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে হট্টগোল হয়। বিক্ষুব্ধ লোকজন দরপত্র ফেলায় বাধাদানে জড়িত ব্যক্তিদের ধোলাই দিয়েছেন। বাধাদানে জড়িত ব্যক্তিরা বিএনপি ও যুবদলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করায় তাঁরা বিব্রত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, কাউকে দরপত্র ফেলতে বাধা দেওয়া হয়নি। উল্টো তাঁরা দরপত্র দাখিল করতে গেলে অচেনা কিছু লোক বিএনপি-যুবদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে।
বালুয়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘যারা শিডিউল ফেলতে বাধাদানের অভিযোগ করেছে, তারাই আমাদের শিডিউল ফেলতে বাধা দিয়েছে। বিনা দোষে আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে।’
সোনাতলার ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিকের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইজারা কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র দাখিলে বাধাদানের অভিযোগ ওঠায় ইজারা কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী, দরপত্র দাখিলের আরও দুই দিন নির্ধারণ করা আছে। সেই কারণে দরপত্র বাতিলের প্রয়োজন হবে না।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর সোনাতলা পৌরসভার ঢালাই রাস্তা নির্মাণের সাতটি প্যাকেজের প্রায় ৯ কোটি টাকার দরপত্র দাখিলে বাধা ও লাইসেন্স আটকে রেখে নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করার অভিযোগ উঠেছিল বিএনপি ও যুবদলের একাংশের নেতাদের বিরুদ্ধে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দরপত র দ খ ল ক দরপত র দ খ ল র র দরপত র য বদল র ব এনপ র শ ড উল র ইজ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা
ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”
এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।
কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”
ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”
এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”
ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”
এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”
জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”
বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক