রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সামনে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। তবে এ হামলার জন্য ছাত্রদলকে দুষলেন সারজিস।
এদিকে, হামলার প্রতিবাদে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে আজ সকালে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

অভিযোগের বিষয়ে ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা নেওয়া হবে। 

গত বুধবারের ঘটনা নিয়ে ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম লিখেন, ‘ইফতারের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সহযোদ্ধাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দিতে এবং তাদের কথা শুনতে যাই। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা হয়, তাদের কথা শোনা হয়, চায়ের আড্ডা হয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি– এই চার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সহযোদ্ধার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে নর্থ সাউথের সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। আমার সঙ্গে ১৫-২০ জন প্রাইভেটের সহযোদ্ধা ছিল। পরে নর্থ সাউথের গেটের সামনে দেখি, ১০-১২ জন ঢাবি সিন্ডিকেট নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শাকিল তাদের নেতৃত্বে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘আমি এগিয়ে যাই তাদের কথা শুনতে। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সঙ্গে থাকা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের গালাগাল করতে থাকে। ওদের ১০-১২ জনের মধ্যে এক-দু’জনকে স্টুডেন্ট মনে হলেও বাকিদের দেখে ভাড়া করা টোকাই দুষ্কৃতকারী মনে হচ্ছিল। বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমি দু’পক্ষকে চলে যেতে বলি এবং চলে আসি। পরে ছাত্রদলের শাকিল তাঁর নেতৃত্বে সঙ্গে থাকা টোকাই দুষ্কৃতকারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমার সঙ্গে থাকা ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলেদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে এবং সরাসরি মাথায় ও পিঠে আঘাত করে একাধিকজনকে রক্তাক্ত করে।’ পোস্টে শাকিলসহ বাকি জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এই ছাত্রনেতা।
এ ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর রাতে ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ ফেসবুক’ নামে পেজে এক পোস্টে বলা হয়, বসুন্ধরা আবাসিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটে সারজিস আলমের আগমন নিয়ে বৈছা ও ছাত্রদল সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক বসুন্ধরা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এদিকে সারজিস আলমের আগমনের খবরে নর্থ সাউথের ৮ নম্বর গেটে জড়ো হন ছাত্রদল সমর্থকরা।
এতে আরও লেখা হয়, দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও দল ঘোষণার দিন প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সারজিস আলমকে জেরা করতে থাকেন। এ সময় সারজিসের সঙ্গে থাকা একাংশের নেতাকর্মীর সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীর তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে সারজিস আলম দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন। পরে হাতাহাতির মধ্যেই বৈছা সমর্থক মুশতাক তাহমিদকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

এদিকে হামলার দায় সংগঠনকে না দিয়ে ব্যক্তিকে দিয়েছেন আহত শিক্ষার্থী মুশতাক তাহমিদ। ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তাঁর পিঠে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাকে ছুরিকাঘাত করা আহমেদ শাকিল ছাত্রদলের নেতা হতে পারে না, সে সন্ত্রাসী। শাকিল যে কাজ করেছে, এটা তার ব্যক্তির দায়, এতে ছাত্রদল তার দোষের দায় নেবে না।’ 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুশতাক বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঘটনায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শাকিল আমাকে ছুরিকাঘাত করে এবং মাসরুর মাথায় আঘাত দেয়। এ ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেউ সেখানে ছিলেন না।  

এনএসইউর এই শিক্ষার্থী বলেন, বৃহস্পতিবার ভাটারা থানায় আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা যখন মামলা করতে গিয়েছিল, তখন সেখানে আহমেদ শাকিল উপস্থিত ছিলেন। ভাটারা থানার ওসি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মামলাটি নেয়নি। থানা থেকে বলা হয়েছে, তাদের ওপর থেকে নির্দেশ আছে, যে কারণে মামলা নিতে পারবে না। আমি মনে করি, ছাত্রলীগ এখন না থাকলেও তারা বিভিন্ন দলের ব্যানারে ঢুকে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।

তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আহমেদ শাকিল। তিনি সমকালকে বলেন, সারজিস আলম তাঁর দলের লোকজন নিয়ে নর্থ সাউথের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হয়তো কেউ পাশ থেকে বলেছেন, ‘ঢাবির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’। তখন সারজিস শোডাউন নিয়ে আমার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করেন, কে এটা বলেছে। তখন আমি জানাই, কেউ হয়তো পাশ থেকে বলেছে। কেননা কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে। এ নিয়ে তারা নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথা বললেও আমি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তিনিই আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ছাত্রদলের ওপর পর্যায়ে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, ভাটারা থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। 
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, আমি বিদেশ থেকে কিছুক্ষণ আগে দেশে এসেছি। এ বিষয়ে আমি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহম দ শ ক ল ইউন ভ র স ট ছ ত রদল র এ ঘটন য় ব সরক র ন ত কর র স মন ঘ ত কর য গ কর আম র স র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ: এবার কাদের বিপক্ষে, কবে খেলবে বাংলাদেশ?

আইসিসির বৈশ্বিক টেস্ট লিগ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। তিনটি সফল চক্র শেষে চতুর্থ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র, ২০২৫-২৭ মাঠে গড়ানোর অপেক্ষা। মঙ্গলবার (১৭ জুন) গলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট দিয়ে শুরু হবে চতুর্থ চক্রের খেলা।

প্রতিটি দল দুই বছরের মধ্যে ছয়টি সিরিজ খেলবে। যার তিনটি দেশের মাটিতে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রতিটি সিরিজ হবে কমপক্ষে দুই টেস্টের। সর্বোচ্চ পাঁচটি টেস্ট থাকতে পারবে এক সিরিজে। এই সময়ে সিরিজ হবে মোট ২৭টি, যেখানে টেস্টের সংখ্যা ৭১টি। ২০২৭ সালের জুনে লিগ টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে হবে ফাইনাল। শেষ তিন আসরের মতো ইংল্যান্ডেই বসবে সাতাশের ফাইনাল। সম্ভাব্য ভেন্যু লর্ডস।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচ খেলেছিল। জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ। ড্র করেছিল একটি। হেরেছিল ছয়টি। পরের চক্রে ১২ ম্যাচে মাত্র ১ জয়, ১০টাতেই হার।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান

বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দল ঘোষণা

সর্বশেষ টেস্ট চক্রে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ দেশের বাইরে, একটি দেশের মাটিতে জিতেছে। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে চারটিতে জিতেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল। এছাড়া নিউ জিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদেশে হারিয়েছিল।

এবারের চক্রে বাংলাদেশ ১২টি ম্যাচ খেলবে। মোট ছয়টি সিরিজ। তিনটি দেশের বাইরে, তিনটি দেশের মাটিতে। দেশের বাইরে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পর কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কেননা দুটি সফরই শেষবারের দুই ফাইনালিস্টদের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে দেশের মাটিতে।    

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই টেস্টের পর বাংলাদেশকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরের ম্যাচের জন্য ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পাকিস্তান ২০২৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফর করবে। ২টি টেস্ট বাদেও ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে। ওই বছরের অক্টোবরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আতিথেয়তা দেবে। নভেম্বর বাংলাদেশ যাবে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

এরপর ২০২৭ সালে ইংল্যান্ড দুই টেস্টের জন্য আসবে ফেব্রুয়ারিতে। মার্চে বাংলাদেশ যাবে অস্ট্রেলিয়া সফরে। ২০০৩ সালের পর ২০২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। আর এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র শেষ হবে।

নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা গত বছর (চক্রে) ৭ নম্বরে শেষ করেছি। এই বছর তো অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে যেন ৪-৫-৬ নম্বরের মধ্যে আসতে পারি। তাহলে খুব ভালো হয়।”

“গত বছর (চক্রে) জয়ের হার সম্ভবত ৪৫ শতাংশ (আসলে ৪৫ পয়েন্ট ও ৩১.২৫ শতাংশ) ছিল। এখান থেকে যদি বাড়াতে পারি—৫০-৫৫ বা ৬০ শতাংশ হলে, একজন অধিনায়ক হিসেবে আমার মনে হয়, ভালো একটা ফল হবে আমাদের।”– যোগ করেন শান্ত।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ