হামলা নিয়ে থানায় অভিযোগ, সারজিস দুষলেন ছাত্রদলকে
Published: 7th, March 2025 GMT
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সামনে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। তবে এ হামলার জন্য ছাত্রদলকে দুষলেন সারজিস।
 এদিকে, হামলার প্রতিবাদে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে আজ সকালে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
অভিযোগের বিষয়ে ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা নেওয়া হবে।
গত বুধবারের ঘটনা নিয়ে ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম লিখেন, ‘ইফতারের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সহযোদ্ধাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দিতে এবং তাদের কথা শুনতে যাই। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা হয়, তাদের কথা শোনা হয়, চায়ের আড্ডা হয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি– এই চার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সহযোদ্ধার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে নর্থ সাউথের সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। আমার সঙ্গে ১৫-২০ জন প্রাইভেটের সহযোদ্ধা ছিল। পরে নর্থ সাউথের গেটের সামনে দেখি, ১০-১২ জন ঢাবি সিন্ডিকেট নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শাকিল তাদের নেতৃত্বে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘আমি এগিয়ে যাই তাদের কথা শুনতে। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সঙ্গে থাকা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের গালাগাল করতে থাকে। ওদের ১০-১২ জনের মধ্যে এক-দু’জনকে স্টুডেন্ট মনে হলেও বাকিদের দেখে ভাড়া করা টোকাই দুষ্কৃতকারী মনে হচ্ছিল। বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমি দু’পক্ষকে চলে যেতে বলি এবং চলে আসি। পরে ছাত্রদলের শাকিল তাঁর নেতৃত্বে সঙ্গে থাকা টোকাই দুষ্কৃতকারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমার সঙ্গে থাকা ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলেদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে এবং সরাসরি মাথায় ও পিঠে আঘাত করে একাধিকজনকে রক্তাক্ত করে।’ পোস্টে শাকিলসহ বাকি জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এই ছাত্রনেতা।
 এ ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর রাতে ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ ফেসবুক’ নামে পেজে এক পোস্টে বলা হয়, বসুন্ধরা আবাসিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটে সারজিস আলমের আগমন নিয়ে বৈছা ও ছাত্রদল সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক বসুন্ধরা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এদিকে সারজিস আলমের আগমনের খবরে নর্থ সাউথের ৮ নম্বর গেটে জড়ো হন ছাত্রদল সমর্থকরা।
 এতে আরও লেখা হয়, দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও দল ঘোষণার দিন প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সারজিস আলমকে জেরা করতে থাকেন। এ সময় সারজিসের সঙ্গে থাকা একাংশের নেতাকর্মীর সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীর তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে সারজিস আলম দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন। পরে হাতাহাতির মধ্যেই বৈছা সমর্থক মুশতাক তাহমিদকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 
এদিকে হামলার দায় সংগঠনকে না দিয়ে ব্যক্তিকে দিয়েছেন আহত শিক্ষার্থী মুশতাক তাহমিদ। ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তাঁর পিঠে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাকে ছুরিকাঘাত করা আহমেদ শাকিল ছাত্রদলের নেতা হতে পারে না, সে সন্ত্রাসী। শাকিল যে কাজ করেছে, এটা তার ব্যক্তির দায়, এতে ছাত্রদল তার দোষের দায় নেবে না।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুশতাক বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঘটনায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শাকিল আমাকে ছুরিকাঘাত করে এবং মাসরুর মাথায় আঘাত দেয়। এ ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেউ সেখানে ছিলেন না।
এনএসইউর এই শিক্ষার্থী বলেন, বৃহস্পতিবার ভাটারা থানায় আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা যখন মামলা করতে গিয়েছিল, তখন সেখানে আহমেদ শাকিল উপস্থিত ছিলেন। ভাটারা থানার ওসি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মামলাটি নেয়নি। থানা থেকে বলা হয়েছে, তাদের ওপর থেকে নির্দেশ আছে, যে কারণে মামলা নিতে পারবে না। আমি মনে করি, ছাত্রলীগ এখন না থাকলেও তারা বিভিন্ন দলের ব্যানারে ঢুকে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আহমেদ শাকিল। তিনি সমকালকে বলেন, সারজিস আলম তাঁর দলের লোকজন নিয়ে নর্থ সাউথের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হয়তো কেউ পাশ থেকে বলেছেন, ‘ঢাবির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’। তখন সারজিস শোডাউন নিয়ে আমার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করেন, কে এটা বলেছে। তখন আমি জানাই, কেউ হয়তো পাশ থেকে বলেছে। কেননা কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে। এ নিয়ে তারা নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথা বললেও আমি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তিনিই আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ছাত্রদলের ওপর পর্যায়ে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, ভাটারা থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। 
 এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, আমি বিদেশ থেকে কিছুক্ষণ আগে দেশে এসেছি। এ বিষয়ে আমি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহম দ শ ক ল ইউন ভ র স ট ছ ত রদল র এ ঘটন য় ব সরক র ন ত কর র স মন ঘ ত কর য গ কর আম র স র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।