নারীর ওপর সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে: নারী দিবস কমিটি
Published: 7th, March 2025 GMT
নারীর ওপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি’। কমিটির সদস্যরা বলেছেন, সবাইকে আগে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নারীর ওপর সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি-২০২৫ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
৫৫টি সংগঠন নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি-২০২৫ গঠিত হয়েছে। এবার ঢাকার বাইরের ১৮টি জেলায় দুর্বার নেটওয়ার্ক, বহ্নিশিখা ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে একই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আজকের আলোচনা সভায় নারী দিবস কমিটির সদস্য মাহমুদা বেগম ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি ১১টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: নারীর ওপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নারী যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
১১ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে: নারী, কন্যাশিশু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে মৌলবাদী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিস্তার রোধেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে প্রচলিত আইনসমূহ সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে।
নারী দিবস কমিটির দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ওপর সহিংসতাবিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
আলোচনায় সদ্য সমাপ্ত অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে বিতর্ক, নারীবিদ্বেষী সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান নারী দিবস কমিটির সদস্য মাহিন সুলতান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানা থেকে এক যৌন সহিংসতাকারীকে মুক্ত করতে কথিত ‘তৌহিদি জনতা’র বিতণ্ডারও নিন্দা জানান তিনি।
নারীর ওপর চলমান সব সহিংসতা জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান ‘বহ্নিশিখা’র সদস্য তাসাফ্ফী হোসেন।
যৌন সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে দুর্বার নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ইভান সরকার বলেন, সমাজের সবাইকে প্রথমে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র যকর পদক ষ প ন র র ওপর র সদস য কম ট র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংস্কার এখনই প্রয়োজন
বছর দুয়েক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সদ্য প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বুঝতে চাইছিলাম, সাড়ে তিন দশক আগের আমার ছাত্রত্বের সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি কতটুকু এগিয়েছে। বুঝলাম, দালান-কোঠায়, টেবিলে টেবিলে ফ্ল্যাটস্ক্রিন এলসিডি কম্পিউটার, এয়ারকন্ডিশন, প্রশস্ত কক্ষ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, স্বাস্থ্য, বিমা, পরিবহন, সুযোগ-সুবিধা—সবকিছুতে প্রতিষ্ঠানটি দারুণভাবে এগিয়েছে।
প্রশ্ন করেছিলাম, ‘রেজিস্ট্রার ভবনে ছাত্রসেবার মান কতটা উন্নত হয়েছে?’ উত্তরদাতা মন্তব্য করেছিলেন, ‘রেজিস্ট্রার ভবনের নাম পাল্টে “লাঞ্চের পর আসুন ভবন” করা দরকার।’ নানা রকম ছাত্র-হেনস্তা আর দীর্ঘসূত্রতার বয়ান শুনে বুঝলাম, তিন দশকেও ছাত্রসেবার গুণগত উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। বাধ্য হয়ে খুবই সংক্ষেপে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা করছি।
মাস্টার্স শেষ করেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চেষ্টা করেছিলাম। বৃত্তিসহ নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে তিনটি নিশ্চিত ভর্তি বাতিল হয়েছে রেজিস্ট্রার ভবনের ‘কল্যাণে’। সে যুগে ই-মেইল ছিল না। বিদেশে ডাকযোগে আবেদন ও যোগাযোগ ছিল দারুণ খরচের। তিনবারের প্রতিবারই সপ্তাহখানেকের সীমাহীন ভোগান্তি। ‘কাল আসুন’, ‘লাঞ্চের পর’, ‘এটা লাগবে, ওটা নেই কেন’ শুনতে থাকলাম।
নীলক্ষেত, নিজের ডিপার্টমেন্ট, ব্যাংক, রেজিস্ট্রার ভবনের এই তলা ওই তলা, এই অফিসার, ওই ডেস্ক। সময়, অর্থ, বোধ-বুদ্ধি ক্ষয়; ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাখ্যা-কৈফিয়ত আর সময় চাওয়া—সবই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘অমুককে ধরো’, ‘তমুককে বলো’, ‘তোমার অমুক শিক্ষক তো শিক্ষকনেতা! উনি বলে দিলে সব ফটাফট হয়ে যাবে’, ‘অমুক ছাত্রনেতা তোমার বন্ধু’। একজন এমনও বলেছিলেন, ‘এসবের মধ্য দিয়েই তো হাজার হাজার ছেলেমেয়ে মাস্টার্স-পিএইচডি করছে! সিস্টেম বুঝলে এক দিনেই সব হবে, না বুঝলে ভুগবে!’ আমার তখন প্রচণ্ড জেদ ও আত্মসম্মানবোধ। না হলে না হবে, ধরাধরি
কখনো করিনি, করবও না। ছাত্রত্ব শেষে একটি এনজিওর গবেষণা শাখায় যোগ দিয়েছি। ফিল্ডওয়ার্কের প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গে ছিলাম।
আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বিভাগেরই ছাত্রী, আমার পক্ষ হয়ে আরও কয়েক দিন নিষ্ফল গলদঘর্ম হলেন। মূল আলাপ এখানেই। অসংখ্য প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা নিজের কাজটি নিজেই করবেন। জানপ্রাণ দিয়ে একা একাই শেষ চেষ্টাটি করে যাবেন। এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই চোখে পড়ে বিভিন্নজনের ট্রান্সক্রিপ্ট নেওয়ার দুর্বহ অভিজ্ঞতার কথা।
তথ্যপ্রযুক্তির এমনই অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে ডিজিটাইজেশন ও অটোমেশন কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি সেটা চায় না? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কি কখনোই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেনি? পরিবর্তন আনা হলে এখনো কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখেই চলেছেন ট্রান্সক্রিপ্ট জোগাড়জনিত বিড়ম্বনার কথা?
তিন দশক আগের আরেকটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করাও দরকার। তখনো গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়নি। মার্কসকে গ্রেডিংয়ের সমমান করে দেখাতে হতো। কোর্স নম্বর লেখা থাকত, শিরোনাম নয়। বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সমমান দেখিয়ে আবেদনের পর নির্দেশনা পেলাম কোর্সের নাম এবং রেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রত্যয়িত মার্কসের জিপিএ সমমান লাগবে। রেজিস্ট্রার অফিসে গেলাম। ঘুরেফিরে সবার দুটিই ভাষ্য। এক, এভাবেই সবাই নিচ্ছে। দুই, নিজেই যেন ব্যাখ্যা দিয়ে দিই। বললাম, সেটিই করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করছে না। উত্তর পেলাম, তাহলে তাদের কিছু করার নেই।
অতীতের ভীতিকর অভিজ্ঞতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনই করিনি। অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে আবেদনসহ নির্ধারিত ফি ও ডাক খরচ পাঠানোর পর আমার ঠিকানাতেই পাঠানো হয়েছে ট্রান্সক্রিপ্টগুলো। বিষয়টি চাকরি-সংক্রান্ত হওয়ায় পিএইচডির ট্রান্সক্রিপ্টই যথেষ্ট বিবেচিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের সুযোগ নেই। যেভাবে চাওয়া হবে, সেভাবেই দলিলপত্র দিতে হবে।ওই ঘটনার কয়েক বছর পর একদিন নীলক্ষেতে কয়েকটি বই ফটোকপি করাচ্ছিলাম। আমার দুর্গতির গল্প শুনে একজন হেসে কুটিকুটি। তিনি জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের ‘হেনস্তাসেবার’ সুযোগে দুটি বিশাল ‘সেবাগোষ্ঠীর’ জন্ম হয়েছে। এক, নীলক্ষেতের সেবা চক্র। টাকা দিলেই তারা সব করে দেয়—অনুবাদ, সমমান নির্ণয়; চাই কি ফলাফলে এদিক-সেদিক, হুবহু সিল-ছাপ্পড় ইত্যাদি। দুই, রেজিস্ট্রার ভবনের দালাল চক্র। তারা সত্যি সত্যিই সব ঠিকঠাক যে রকম লাগবে, সে রকমটিই করে দেয়, তবে টাকাপয়সা লাগে। বুদ্ধিমানেরা কেউ রেজিস্ট্রার অফিসের ঝক্কিতে যান না।
বক্তা জানালেন, তিনি অনেককেই চেনেন-জানেন, যাঁরা নীলক্ষেতের সেবা নিয়েই মাস্টার্স-পিএইচডি করে এসেছেন। সন্দেহ হতে লাগল, এই দুই ধরনের দুর্নীতি চক্রের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ছাত্রসেবার সংস্কার আটকে নেই তো! না হলে অতশত সিন্ডিকেট-সিনেট, সমিতি মিটিং, শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? খানিকটা ভীতসন্ত্রস্ত হলাম অনেকের ঝুঁকি নেওয়ার কথা শুনে।
ট্রান্সক্রিপ্ট জালের কারণে কানাডা থেকে প্রতিবছর অসংখ্য ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল হয়, যাঁদের অনেকেই বাংলাদেশি। অ্যাসোসিয়েশন অব রেজিস্ট্রারস অব দ্য ইউনিভার্সিটিজ অ্যান্ড কলেজেস অব কানাডা (এআরইউসিসি) ছাত্রদের ব্যক্তিগত সম্মান ও গোপনীয়তার স্বার্থে নামধাম গোপন রাখলেও বাংলাদেশের ট্রান্সক্রিপ্টকে সন্দেহের তালিকায় রাখে।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বনাম আহমদ ছফার গাভী বিত্তান্ত২৯ এপ্রিল ২০২৫প্রশাসনিক ভবনের অন্যায্যতা দেখেছি আমার ভূতপূর্ব কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও। বিদেশে দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি করতে হয় ২২ মাসে, ২৪ মাসে নয়। মাস্টার্স শেষে ফেরার পর প্রাপ্য ইনক্রিমেন্টের জন্য আবেদন করলে এই অজুহাতে আমাকে বঞ্চিত করা হয় যে ২৪ মাসে নয়, ২২ মাসে সম্পন্ন করায় এটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি হয়নি।
সম্মানের বদলে অপমান! রেজিস্ট্রার ছিলেন অফিসার থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। চিঠিটি পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ভুল ভাঙানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। তাঁর কূপমণ্ডূকতা ও অনড় অবস্থান দেখে এতটাই বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম, আর একটি কথা বলতেও রুচিতে বেধেছে। বুঝলাম, এই জগদ্দল সরবার নয়। আমার পর একই প্রতিষ্ঠান থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক শিক্ষক একই দৈর্ঘ্যের, একই ফ্যাকাল্টির, একই ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তাঁদের কেউই বঞ্চিত হননি। তাঁদের বঞ্চিত না হওয়ার যোগ্যতা, তাঁরা রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট, ‘সিস্টেম’বান্ধব।
এখন বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে উচ্চশিক্ষার আবেদন নেয়। সাধারণত দুটি বিষয়ে আবেদনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়নির্ভর। এক, বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনকারীর পক্ষ হয়ে মূল ট্রান্সক্রিপ্টগুলো (পাঠক্রম-মূল্যায়ন) সরাসরি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই আদান-প্রদানটি অনলাইনভিত্তিক। ব্যতিক্রম সামান্য। নিজেরই একটি অভিজ্ঞতা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমার বর্তমান কর্মস্থলে আবেদনপত্রের শর্তে বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ, রেজিস্ট্রার অফিসের স্বাক্ষর-সিলমোহরসহ সম্প্রতি উত্তোলন করা মূল কপিগুলো (ফটোকপি বা ডিজিটাল কপি) নিজেই সংগ্রহ করে পাঠানোর নির্দেশনা ছিল।
অতীতের ভীতিকর অভিজ্ঞতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনই করিনি। অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে আবেদনসহ নির্ধারিত ফি ও ডাক খরচ পাঠানোর পর আমার ঠিকানাতেই পাঠানো হয়েছে ট্রান্সক্রিপ্টগুলো। বিষয়টি চাকরি-সংক্রান্ত হওয়ায় পিএইচডির ট্রান্সক্রিপ্টই যথেষ্ট বিবেচিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের সুযোগ নেই। যেভাবে চাওয়া হবে, সেভাবেই দলিলপত্র দিতে হবে।
প্রতিবেশী ভারতও এখন শতভাগ অনলাইন পদ্ধতিতে ছাত্রদের সব একাডেমিক তথ্যসহ ট্রান্সক্রিপ্টের আবেদন, যাচাই-বাছাই, সত্যায়ন ও সরবরাহ করে। পদ্ধতিটির নাম ‘ট্রুকপি’। কানাডায় ‘মাইক্রেডস’। এআরইউসিসির মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এই নেটওয়ার্কে যুক্ত। অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেটওয়ার্ক ‘ডিজিটারি’। যুক্তরাষ্ট্রের প্ল্যাটফর্ম একাধিক—‘ব্যানার’, ‘অ্যালুসিয়ান’, ‘পিপলসফট’, ‘পার্চমেন্ট’। সম্প্রতি এগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যুক্ত হয়েছে, যা খুব সহজে জাল-ভেজাল শনাক্ত করতে পারে। সমন্বিত প্ল্যাটফর্মটির পরিচিতি এসআইএস বা ‘স্টুডেন্টস ইনফরমেশন সিস্টেম’।
বাংলাদেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র পরিষেবাও প্ল্যাটফর্মনির্ভর। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈশ্বিক নিয়মকানুনের সঙ্গে মিল রেখে ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করছে। ফলে গ্র্যাজুয়েটরা এক-দুই দিনের মধ্যে বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন করতে পারছেন; নির্ঝঞ্ঝাটে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। তবু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভোগান্তি-বিড়ম্বনা টিকিয়ে রাখছে কেন?
● হেলাল মহিউদ্দীন, ভিজিটিং প্রফেসর, মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র