নারীর ওপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি’। কমিটির সদস্যরা বলেছেন, সবাইকে আগে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নারীর ওপর সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি-২০২৫ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

৫৫টি সংগঠন নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি-২০২৫ গঠিত হয়েছে। এবার ঢাকার বাইরের ১৮টি জেলায় দুর্বার নেটওয়ার্ক, বহ্নিশিখা ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে একই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

আজকের আলোচনা সভায় নারী দিবস কমিটির সদস্য মাহমুদা বেগম ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি ১১টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: নারীর ওপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নারী যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।

১১ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে: নারী, কন্যাশিশু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে মৌলবাদী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিস্তার রোধেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে প্রচলিত আইনসমূহ সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে।

নারী দিবস কমিটির দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ওপর সহিংসতাবিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।

আলোচনায় সদ্য সমাপ্ত অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে বিতর্ক, নারীবিদ্বেষী সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান নারী দিবস কমিটির সদস্য মাহিন সুলতান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানা থেকে এক যৌন সহিংসতাকারীকে মুক্ত করতে কথিত ‘তৌহিদি জনতা’র বিতণ্ডারও নিন্দা জানান তিনি।

নারীর ওপর চলমান সব সহিংসতা জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান ‘বহ্নিশিখা’র সদস্য তাসাফ্ফী হোসেন।

যৌন সহিংসতা বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে দুর্বার নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ইভান সরকার বলেন, সমাজের সবাইকে প্রথমে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র যকর পদক ষ প ন র র ওপর র সদস য কম ট র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল

ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।

গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। 

ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।

গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। 

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। 

ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়। 

সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের  মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল
  • এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল