২০১৯ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি গৃহিণী ফেরদৌস জাহান খান প্রথম আলোতে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং কর্মশালার একটি সংবাদ দেখতে পান। সংবাদটি পড়ে ঘরে বসে অবসর সময়ে ফ্রিল্যান্স কাজ করতে আগ্রহী হন তিনি। কিন্তু নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে না পারায় মেয়েকে ফ্রিল্যান্স কাজ শেখানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর দেরি না করে বিনা মূল্যে কর্মশালায় অংশ নিতে মা-মেয়ে দুজনই উপস্থিত হন ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট আয়োজিত বিনা মূল্যের ফিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।

কর্মশালায় অংশ নিয়ে বেশ অবাক হন তিনি। দেখেন তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি ৬০ থেকে ৬৫ বছরের অনেকেই কর্মশালায় উপস্থিত রয়েছেন। কেউ আবার ছোট সন্তান নিয়ে অংশ নিয়েছেন। আর তাই মনে একটু সাহস পান তিনি। নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে না পারায় কর্মশালা শেষে মেয়েকে ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণে ভর্তি করান। কিন্তু ফ্রিল্যান্স কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, আপনিও ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করতে পারবেন। আপনার মতো অনেকেই ফ্রিল্যান্স কাজ করছেন। সবার উৎসাহ পেয়ে তিনিও গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন। শুরু করেন নিয়মিত ক্লাস।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরপরই দেশে শুরু হয় করোনা মহামারি। সে সময় বাসায় পুরো পরিবার অনলাইনে শিখতে থাকেন ফ্রিল্যান্স কাজ। এভাবে ধীরে ধীরে ক্যালেন্ডার, বিজনেস কার্ড, লোগো ব্যান্ডিংয়ের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ফেরদৌস জাহানের। অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরের কাজগুলোও আনন্দের সঙ্গে করতেন তিনি। প্রথমে তিনি ফাইভআর মার্কেটপ্লেসে (অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট) শুরু করলেও পরে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে থাকেন। একই সঙ্গে ফেরদৌস জাহান অ্যাডবি স্টক, সাটার স্টকে বিভিন্ন কাজ জমা দেন। কাজগুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ফ্রিল্যান্সিং কাজ ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরপর তিন বছর ধরে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন ফেরদৌস জাহান। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, ব্যানার থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইনের বিভিন্ন কাজও করেন তিনি।

নিজের ফ্রিল্যান্স প্রশিক্ষণের শুরুর দিনগুলোর কথা তুলে ধরে ফেরদৌস জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেন্টর যখন কম্পিউটার রিফ্রেশ দিচ্ছিলেন, তখন আমি ভেবেছিলাম মেন্টর কিছু একটা করেছেন, যেটা আমি বারবার বুঝতে পারছি না। আমিও মেন্টরকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, এটা কী করলেন আমি তো মিস করছি। মেন্টর হেসে জানান, “কই কিছুই তো করিনি। যেটা আপনি মিস করবেন।” তারপর মেন্টর বললেন, “ও, এটা তো রিফ্রেশ।” তখন আমি বুঝতে পারি বিষয়টা।’

ফেরদৌস জাহান খান গ্রাফিক ডিজাইন, করপোরেট ইংলিশ ও মোশনের ওপরে দক্ষতা অর্জন করেছেন। শুধু তা–ই নয়, নিজে শিখে মেয়ে নোওরিন খানকেও শিখিয়েছেন। বর্তমানে নোওরিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে পড়ালেখা করছেন।

ফেরদৌস জাহান খানের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্স কাজ শিখেছেন তাঁর স্বামী রিয়াজ খানও।
ফেরদৌস জাহানের স্বামী রিয়াজ খান প্রথম আলোকে বলেন,‘এক্সেল গ্রাফিক ডিজাইন ও ওয়েব ডিজাইন শিখেছি। আসলে শেখার ব্যাপারটা আমরা আনন্দ নিয়েই করতাম। অনলাইনে শিখতাম কিন্তু ফেরদৌস জাহান এই বিষয়ে সাহায্য করতেন। আমরা তিনজন তিন রুমে ক্লাস করতাম। করোনার দিনগুলো এভাবে কেটেছে। আমাদের যে কাজ বা দক্ষতা বাড়িয়েছি, সেটা আমাদের চাকরিতে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি, যা কাজের ক্ষেত্রকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।’

স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে কাজ করছেন ফেরদৌস জাহান খান।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র ফ ক ড জ ইন করছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ