নারীকে দমন–পীড়নের নতুন পন্থা, কোন সমাধান নেই?
Published: 8th, March 2025 GMT
সাম্প্রতিক কালে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও ভায়োলেন্সের এক নতুন স্বর্ণালী যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তা হল সাইবার বুলিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যারাসমেন্ট ও ডিজিটাল নির্যাতন।
সাম্প্রতিক কালে এই প্রবণতা সর্বকালের সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। যে কোন ইস্যুতে, যে কোন উদ্দেশ্যে, যে কোন মতানুসারী পুরুষরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলে পড়ছেন নারীর ওপর; নারীকে চুপ করানোর, দমন পীড়নের আর শাস্তি দেবার এমন সহজ উপায় বোধ হয় আর নেই। কখনো কখনো দল বেঁধে টার্গেট করে কোন কোন নারীর ওপর এই নির্যাতন চালানো হচ্ছে দিনের পর দিন। আর সবচেয়ে বেশি টার্গেট হচ্ছেন রাজনৈতিক বা সামাজিক ভাবে সক্রিয় নারীরা।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ২০২২ সালে একটি গবেষণায় দেখিয়েছিল যে বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ নারী কোন না কোনভাবে অনলাইন নির্যাতন ও ভায়োলেন্সের শিকার হন। নি: সন্দেহে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় থেকে এ পর্যন্ত এই ভায়োলেন্সের হার সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। গণঅভ্যুত্থানের নারী সমন্বয়ক ও সক্রিয় কর্মীদের আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অকল্পনীয় ও অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছি তখন, এখনো তাই দেখছি।
অপরদিকে ছাত্রলীগের নেত্রীবৃন্দ এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থক হওয়ার কারণে নারী সাংবাদিক, লেখক, অ্যাকটিভিস্টরাও অনলাইন আক্রমণ থেকে বাদ যান নি মোটেও। উভয় পক্ষের পুরুষরাই প্রতিপক্ষের নারীদের পীড়ন করার জন্য অনলাইন প্লাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন ব্যাপক হারে। এমনকি প্রতিপক্ষ পুরুষকে ঘায়েল করার বেলায়ও তাদের পরিবারের বা ঘনিষ্ঠ নারীদের টার্গেট করা হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, তাদের কারও পুরুষ সহযাত্রী বা পথের সাথীকে এসবের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
অ্যাকশন এইডের গবেষণা অনুযায়ী অনলাইন নির্যাতনের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক (৪৭ শতাংশ), তারপর মেসেন্জার (৩৫ শতাংশ)। সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে ফেসবুকে কোন নারীকে নিয়ে আপত্তিকর, নোংরা, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ এবং ঘৃণা বিদ্বেষমূলক কমেন্ট করা (৮০ দশমিক ৪ শতাংশ)।
এর পরেই আছে ইনবক্সে নোংরা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ বা ছবি পাঠানো (৫৩ শতাংশ)। ১৭ দশমিক ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ফেক আইডি খুলে হ্যারাসমেন্টের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। ১১ দশমিক ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে নারীদের ফেসবুকের ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য অনুমতি না নিয়ে পোস্ট করা হয়েছে এবং বুলিং করা হয়েছে। ১১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ফেসবুক ওয়ালে বা মেসেন্জারে ক্রমাগত ধর্ষণ বা সেক্সুয়াল এসল্টের হুমকি পেয়েছেন।
ডিজিটাল মব লিঞ্চিং এর এই যুগে ধর্ষকামী পুরুষের জন্য কোন নারীকে অনলাইনে ধর্ষণ করা এখন খুব সোজা। হাতের কাছে না পেলেও নারীকে অনলাইনে প্রহার, ধর্ষণ বা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট করতে তেমন কিছু লাগে না, একটা ফেসবুক আইডি থাকলেই চলে।
সুদূর সাতক্ষীরায় বসে একটা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ঢাকার কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বা নারী শিক্ষক, উচ্চপদস্থ নারী, এমনকি নারী উপদেষ্টা যে কাউকে মনের সুখে যৌন নির্যাতন করা যায়। এতে কারও কিছু আসে যায় না, কারও কোন বিচারও হয় না, কেউ কোন প্রতিবাদও করে না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এ থেকে উল্টো মর্ষকামী আনন্দ গ্রহণ করেন। অনেকে নিজে নির্যাতন না করলেও এগুলো শেয়ার করার মাধ্যমে আরও বেশি ব্যবহারকারীর মধ্যে ছড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের মিসোজিনিস্ট পুরুষদের জন্য এমন সুদিন আর কখনো আসেনি।
রাজনীতিতে, খেলার মাঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রে, সামাজিক অ্যাকটিভিজমে বা সেলিব্রেটি দুনিয়ায় নারীকে দমন করার, পীড়ন করার, চুপ করিয়ে দেবার, পিছিয়ে দেবার যে মোক্ষম অস্ত্র বাংলাদেশের পুরুষরা, কখনো কখনো তাদের সহযোগী নারীরাও ক্রমাগত ব্যবহার করে চলেছেন ডিজিটাল দুনিয়ায়, এর শেষ কোথায়?অনলাইন হ্যারাসমেন্ট নারীদেরকে কেবল পরিবার ও সমাজের চোখে হেয়, ব্রিবত ও লজ্জিতই করে না, নারীর ওপর এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী ও ভয়াবহ। আইইউটি বাংলাদেশ এর গবেষক ড মো রুহুল আমিন তাঁর “কজেস এন্ড কনসিকুয়েন্সেস অফ সাইবার বুলিং এগেইনস্ট উইমেন ইন বাংলাদেশ: এ কমপ্রিহেনসিভ স্টাডি” তে বলেছেন অনলাইন নির্যাতনের শিকার নারীরা মানসিক ও ইমোশনাল ডিসট্রেস, ভীতি ও উদ্বেগ, সোশ্যাল আইসোলেশন বা সমাজচ্যুতির দিকে এগিয়ে যান।
অ্যাকশন এইডের মতে ৬৫ শতাংশ তীব্র সাইকোলজিকাল ট্রমা, বিষন্নতা ও উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগেন, ৪২ শতাংশ মত প্রকাশে বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার থেকে সরে আসেন, ২৫ শতাংশ আত্নবিশ্বাস ও আত্নসম্মান হারানোর সমস্যায় ভোগেন। কেউ কেউ হয়তো সেলফ হার্ম এমনকি আত্নহত্যার পথও বেছে নেন। নারীর প্রতি সরাসরি শারিরীক সহিংসতা বা নির্যাতনের চেয়ে এই ডিজিটাল নির্যাতন মোটেও ছোট অপরাধ নয়, অথচ এ বিষয়ে আমরা নীরব। গবেষণা বলছে অনলাইন নির্যাতনের শিকার নারীদের ৮৫ শতাংশই এ বিষয়ে কোথাও কোন অভিযোগ করেন নি, আর ১৫ শতাংশ করে থাকলেও খুব কম সংখ্যক নারীই কোন সুবিচার পেয়েছেন। যে দেশে ধর্ষণেরই বিচার হয় না সেখানে ডিজিটাল ধর্ষণের বিচার চাওয়া বোকামিই বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সময় এসেছে এ নিয়ে কথা বলার। ঘুরে দাঁড়ানোর।
এ বছরের ৪ মার্চ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাতসুশিমা সুমাইয়া নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেন যে তিনি ক্রমাগত হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছেন। টানা এই সব হুমকির কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ার কথাও জানান তিনি।
আরও পড়ুননারীর ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি কি শুধুই ‘মব ভায়োলেন্স’২০ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা মাহমুদা মিতু এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “আমার ইনবক্সের গালি আর থ্রেট আর ম্যাসেজ গুলো যদি দেখাতে পারতাম তাহলে যেকোনো সুস্থ মানুষ পাগল হয়ে যেত। সেক্সুয়ালি পার্ভাট লোকের সংখ্যা মারাত্মক হারে বাড়ছে। “শেষ পর্যন্ত তিনি লেখেন-সাধারণ শালীন ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা অরাজনৈতিক মেয়েদের জন্য প্রথম প্রথম এসবে কষ্ট হবে এর পর কেউ গায়ে মাখবেনা। বাংলাদেশের রাজনীতির পথ চলা এমনই! ”
মনে পড়ে গত বছর এক সেমিনারে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিউটের চিফ অফ স্টাফ ফৌজিয়া আফরোজ এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “দেশে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এমনিতে কম। রক্ষণশীল সংস্কৃতি ও সামাজিক আচরণ নারীকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করে। এর ওপর অপতথ্য ছড়ালে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আরও সংকুচিত হবার আশংকা থাকে। “তিনি দেখিয়েছিলেন রাজনৈতিক অ্যাকটিভিজম বা নির্বাচনের সময় যারা ক্রমাগত অপতথ্যের শিকার হন ডিজিটাল মিডিয়ায় তার শীর্ষ দশই নারী। ট্রলিং, ডক্সিং, ডিপফেক ছবি ব্যবহার, অন্তরঙ্গ ছবির ব্যবহার, যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য ইত্যাদির মাধ্যমে এই নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে নুসরাত জাহান, উমামা ফাতেমারা যেমন অনলাইন হয়রানির শিকার হয়েছেন, পরবর্তীতে সামিনা লুৎফা, গীতি আরা নাসরিন, সাংবাদিক দীপ্তি চোধুরী, ব্যারিস্টার রুমীন ফারহানা, এমনকি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পর্যন্ত কেউ ই রেহাই পান নি। যে ভাবে অভিনেত্রী বাঁধন সে সময় সহিংস ডিজিটাল ভায়োলেন্সের শিকার হলেন, সেই একই ভাবে এই সময় এর বিপরীতে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন বা সোহানা সাবাকে ডিজিটাল সহিংসতার শিকার হতে হল। এখানে আক্রমণকারীরা ভিন্ন মতাদর্শী হলেও নারীর চরিত্র হননের বেলায় সবাই এক।
ডিজিটাল প্লাটফর্মে পুরুষকে আক্রমণ করার সময়ও সংশ্লিষ্ট নারীদেরই টার্গেট করার প্রবণতা দেখা যায়। যেমনটা আমরা আগে ঘটতে দেখেছি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের স্ত্রী বা মেয়র আতিকুল হকের কন্যার বেলায়, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখন দেখি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মেয়ের ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি তিনি মিডিয়াকে বলতে বাধ্য হয়েছেন যে তাঁর পরিবারকে এভাবে আক্রমণ করা হবে জানলে তিনি এই পদে আসতেন না। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের একটি ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে বিশেষ করে টার্গেট হয়েছেন আদৃতা রায়, সেটা তার পিতার পরিচয়ের কারণেই। কোন ব্যক্তি বা পরিবারকে হেয় করতে চাইলে সেই পরিবারটির নারী সদস্যকে বেছে নেয়াটা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
রাজনীতিতে, খেলার মাঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রে, সামাজিক অ্যাকটিভিজমে বা সেলিব্রেটি দুনিয়ায় নারীকে দমন করার, পীড়ন করার, চুপ করিয়ে দেবার, পিছিয়ে দেবার যে মোক্ষম অস্ত্র বাংলাদেশের পুরুষরা, কখনো কখনো তাদের সহযোগী নারীরাও ক্রমাগত ব্যবহার করে চলেছেন ডিজিটাল দুনিয়ায়, এর শেষ কোথায়?
এই ভয়ংকর সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার নারীরা কোথায়, কার কাছে বিচার চাইবেন, যেখানে কখনো কখনো রাষ্ট্র নিজেই এই ধরণের আচরণকে উৎসাহিত করে চলেছে? শুনেছি দেশে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, আছে সেন্টার ফর ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন এন্ড চিলড্রেন এর ন্যাশনাল হেলপ লাইন, আদৌ কি আমাদের এই ধরণের ডিজিটাল নির্যাতনের বিচার চাইবার কোন জায়গা আছে এদেশে? আছে কি নারীদের সুবিচার পাবার কোন সুযোগ?
তানজিনা হোসেন কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র র ওপর র জন ত ত ব যবহ র পর ব র ফ সব ক র জন য হয় ছ ন দশম ক সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি