মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আট বছরের এক শিশুকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ উঠে। এর তিন দিন পর আজ শনিবার সদর থানায় চারজনের নামে মামলা করেন শিশুটির মা।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। চার আসামি হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগম (৪০)।

তিনি আরও বলেন, শিশুটির মা ঢাকা থেকে স্বামী ও বড় মেয়েকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)-এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়।

এজাহারে শিশুটির মা উল্লেখ করেন, বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ করেননি।

মামলায় বলা হয়েছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে শিশুটি ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই। মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। বিষয়টি হালকাভাবে নেন তিনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে একই কথা জানান। তখন তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, রাতে দুলাভাই দরজা খুলে দিয়েছিল। তখন তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে বোনের কক্ষে ফেলে রেখে যায় হিটু শেখ। বোন বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানাতে গেলে সজীব ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। পরে দুই বোনকে দুই কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সজিবের মা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তিনি।

মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ি।

পরিবার জানায়, আট বছরের শিশুটিকে গত বুধবার ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

অবস্থার আরও অবনতি হলে বিকেল ৫টার দিকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ র বড় ম য় ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে লুক্সেমবার্গও

নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা কয়েকটি দেশ আগেই দিয়েছে। এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

গত সোমবার রাতে লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক মাসে (গাজায়) মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে একটি আন্দোলন গড়ে উঠছে। আন্দোলনকারীরা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নীতিকে (ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটে) এখনো প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখার দাবি করছেন। লুক্সেমবার্গ সরকার ওই সব দেশের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যারা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের নীতিতে আগামী সপ্তাহের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

আরও পড়ুনগাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন২০ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগের (ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি) তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সোমবার বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে আরও ‘উদ্দীপ্ত’ করছে।

এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন।

ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত সোমবার বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে আরও ‘উদ্দীপ্ত’ করছে।

এ হামলার অজুহাতে ওই দিন থেকেই গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৯০৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হতাহতের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে বিবেচনা করে।

আরও পড়ুনফ্রান্স কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে: মাখোঁ০৯ এপ্রিল ২০২৫

ইতিমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তাঁদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের এর উসকানিদাতা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত কয়েক মাসে (গাজায়) মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে।লুক ফ্রাইডেন, লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও বেলজিয়ামের নামও আছে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে ২২১ আইনপ্রণেতার চিঠি২৬ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে লুক্সেমবার্গও