ঘড়িতে বেলা ১১টা। চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কের পাশে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছেন ২৫০ জন মানুষ। সুলভ মূল্যের পণ্য নিয়ে ট্রাক আসতেই কিছুটা বিশৃঙ্খলা হলো। পরে নারী ও পুরুষ—দুই সারিতে দাঁড় করালেন বিক্রয়কর্মীরা। এরপর শুরু হয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। তবে কড়া রোদ হওয়ায় পণ্যের জন্য অপেক্ষায় হাঁপিয়ে উঠছিলেন ক্রেতারা।

আজ রোববার আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কের পাশে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের চিত্র ছিল এমন। পবিত্র রমজান মাসে পণ্যের আশায় কড়া রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা ছিল ভোক্তাদের। রোদের কারণে কেউ ছাতা ধরেছেন, কেউ-বা সঙ্গে আনা বস্তা মাথায় ধরেছেন রোদ থেকে বাঁচতে। অধিকাংশ ভোক্তাকে দেখা গেছে, রোদ থেকে বাঁচতে ছায়ার খোঁজে লাইন থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়িয়েছেন।

তাঁদের একজন ষাটোর্ধ্ব আবুল কাশেম। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায়। রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ফুটপাতে গাছের নিচে বসে ছিলেন। এর আগে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে ছিলেন টিসিবির পণ্য কেনার সারিতে। তিনি বলেন, ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। তাই রোদ উপেক্ষা করে টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন। তবে ট্রাক দাঁড়িয়েছে রোডের মধ্যে। তাই রোদ থেকে বাঁচতে এখানে বসেছেন।

এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিসিবির পণ্য নিতে ২৫০–২৬০ জন ভোক্তা সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ক্রেতাদের ভাষ্য, রোজায় পণ্যগুলো রোদের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু রমজানে ভোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে কষ্ট হয়, তাই একটু ছায়ায় পণ্য বিক্রি করলে সুবিধা হয়। তবে টিসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবেশকদের বলা আছে যাতে তাঁরা রোজায় অন্তত ছায়াযুক্ত এলাকায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে পণ্য বিক্রি করে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম নগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমজান মাস উপলক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।

শুরুতে প্রতি ট্রাকে ২০০ জন করে নগরে প্রতিদিন চার হাজার ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করত টিসিবি। তবে প্রতিদিন প্রতি ট্রাক থেকেই অন্তত ৫০ থেকে ১৫০ জন ক্রেতা ফেরত যেতেন। এ ছাড়া ট্রাক থেকে পণ্য নিতে বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোল হতো। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বুধবার থেকে প্রতিটি ট্রাকের বরাদ্দ ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫০০ গ্রামের পরিবর্তে খেজুরের পরিমাণ জনপ্রতি এক কেজি করা হয়েছে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন ২০টি ওয়ার্ডের আট হাজার গ্রাহকের কাছে ট্রাকে করে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও এক কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। সব মিলিয়ে এর মূল্য ৬৬৫ টাকা। পণ্য কিনতে আপাতত পরিবার কার্ডের প্রয়োজন হচ্ছে না।

তবে এ মাসে টিসিবির কার্যক্রমে এখনো চাল দেওয়া হচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবি ৩০ টাকা দরে এসব চাল বিক্রি করে। অনুমোদন না নেওয়ার কারণে চাল বিক্রি হচ্ছে না। তবে আগামী মাসে ট্রাকে চাল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির কর্মকর্তা। টিসিবি ছাড়া নগরে প্রতিদিন ২৫ টন ও প্রতি উপজেলায় ৩ টন করে ওএমএস দোকানের মাধ্যমে চাল বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর।

টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো.

শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী মাস থেকে চাল দেওয়া হবে। রোজার কথা মাথায় রেখে ট্রাকে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। রোজাদারেরা যাতে ঠিকভাবে পণ্য নিতে পারেন সেটির নির্দেশনা দেওয়া আছে পরিবেশকদের। ছাতাযুক্ত এলাকায় ট্রাক থামানোর জন্য বলা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি

প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।

ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।

তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।

মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।

আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।

আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদ

আনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।

সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি