শ্যামলীর বেসরকারি চাকরিজীবী শামসুল আলমের দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে কয়েক মাস ধরে উদ্ভট পোশাক পরছে, উল্টাপাল্টা আচরণ করছে। কেন এ রকম করছে, তার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ছেলেটি টিকটক ও রিলসের প্রতি আসক্ত হয়ে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা করছে। এসএসসির প্রস্তুতির সময় ছেলের এমন আচরণে চিন্তিত হয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন তিনি।

অবসরে কিশোরী মেয়ের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন লিলি আক্তার। মেয়ে মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিলস দেখছিল। হঠাৎ বিশেষ অঙ্গভঙ্গির একটি ভিডিও সামনে চলে এলে বিব্রত হয়ে মায়ের দিকে তাকায় ১৩ বছর বয়সী মেয়ে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেন লিলি। মেয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে বলতে গিয়ে এ ঘটনার বর্ণনা দেন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা লিলি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চাকরিজীবী হওয়ায় যোগাযোগ রক্ষার জন্য মেয়ের হাতে ফোন তুলে দিতে হয়েছে তাদের। লিলি আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে ইউটিউবে প্রাপ্তবয়স্ক কিছু রিলস দেখে সেও ওই ধরনের ভিডিও তৈরি করতে চায়। অনেক কিছু বলে বুঝিয়ে তাকে থামাই।

শুধু লিলি ও শামসুল নন, সন্তানদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে বেশির ভাগ অভিভাবকই চিন্তিত। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোয় প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট বাড়ছে। যৌনতায় ভরা দৃশ্য ও কুরুচিপূর্ণ সংলাপের প্রদর্শন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই ধরনের কনটেন্ট বিনোদন হিসেবে প্রদর্শিত হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীর ওপর পড়ছে বলে মনে করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এসবের ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন। বাড়ছে নৈতিক অবক্ষয়। উগ্র আচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা, খুন, জখম, রাহাজানি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলছে। মাদকে ঝুঁকছে কিশোর-কিশোরী। বিষণ্নতা গ্রাস করছে। বাড়ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি।  

সাইকোলজিক্যাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস কেয়ারের (পিএইচডব্লিউসি) মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অন্তরা অন্তু বলেন, কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম, যারা এখনও নিজেদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন নয়, তারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে।

অন্তু বলেন, রিলস খুব স্বল্প সময়ের হয়। একজন মানুষ যখন সবসময় এগুলো দেখতে থাকে, তখন তার দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা কমে যাবে। এটার প্রভাব পড়ালেখা ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে পড়ছে। এ ধরনের ঘটনা সারাবিশ্বে পাওয়া যাচ্ছে এবং এগুলো নিয়ে গবেষণা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের চটকদার বিষয়গুলোর প্রতি আকর্ষণ বোধ করা স্বাভাবিক। ফোনে আসক্তি অনেক সময় পরিবার থেকেও শুরু হতে পারে। যখন একটি শিশু দেখে বাবা-মা বা পরিবারের সবাই ফোন স্ক্রল করছে, তখন সেও তাতে আগ্রহী হয়। এ ছাড়া অনেক সময় বাবা-মাও সন্তানকে শান্ত রাখতে গিয়ে তাদের হাতে ফোন তুলে দিচ্ছেন, যেটা পরে আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্ট দেখা তরুণদের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়ছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে না পারায় তারা সহজেই হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। একসময় এই হতাশা তাদের আত্মঘাতী চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন প্রকাশিত ২০২১-২২ সালে পরিচালিত একটি অনলাইন সমীক্ষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির ফলে ৬৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগতে থাকা মানুষ পাওয়া গেছে।

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.

ফারজানা রাবিন বলেন, কমবয়সী কেউ প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট দেখলে তার ব্যক্তিত্ব তৈরিতে সমস্যা হবে। এ ধরনের ঘটনা আমরা অনেক পাই। এগুলো নিয়ে পদক্ষেপ না নিলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। সরকার ও আইনি পদক্ষেপের আগে পরিবারকে এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এগুলো নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, বাইরের দেশে যৌন শিক্ষার ভালো-মন্দ দিক যেভাবে পরিচয় করানো হয়, শেখানো হয়, আমাদের দেশে তার উল্টো চিত্র। বিষয়টি এখনও ট্যাবু হয়েই আছে। সামাজিক ট্যাবু ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো তরুণ-তরুণীদের আরও বেশি আগ্রহী করে তুলছে। এটা আইন দিয়ে ঠেকানোর চেয়ে সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্কের বোঝাপড়াটা জরুরি।

তিনি বলেন, কোন বয়সে কোন বিষয় ও কনটেন্ট দেখা এবং জানা জরুরি, তা শিশুকাল থেকেই শিক্ষার একটি প্রক্রিয়া। এটা হুট করে বন্ধ বা খুলে দেওয়ার বিষয় না।
গত কয়েক বছরে পর্নোসহ ৩০ হাজারের বেশি অশ্লীল ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে বিটিআরসি। এর পরও সামাজিক মাধ্যমের রিলস, পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে এসব ছড়িয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত আইন থাকলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনেকাংশেই দুর্বল। অশ্লীল ভিডিও সরাতে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব স্পষ্ট। আবার সামাজিক মাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন ধরে এগুলো নিয়ে কাজ করছে বলে জানালেও বাস্তবে এর প্রভাব খুব সামান্যই।

আইনজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি আইন রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটি (২০০৬) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বেআইনি কার্যক্রম, মিথ্যা তথ্য প্রচার, সাইবার বুলিং এবং মানহানিকর পোস্ট শেয়ার করা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে পরে সংশোধনও করা হয়। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের (২০১২) মাধ্যমে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরি, বিতরণ ও সংরক্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০১৮) তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য প্রচার বা মানহানিকর পোস্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রণীত হয়েছে। এসব আইনে কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাগজে-কলমে এসব আইন বিদ্যমান থাকলেও সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা প্রতিরোধে এগুলোর প্রয়োগ যৎসামান্য।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) অশ্লীল ও অসামাজিক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে জানান সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। এগুলো পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও কীভাবে ন্যূনতম পর্যায়ে আনা যায়, সে বিষয়ে কাজ চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সমকালকে বলেন, সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে যেই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইন্টারনেট বন্ধ না করে এগুলো পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। সরকার যেহেতু ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে, তাই ইন্টারনেট কখনও শাটডাউন করা হবে না। সে জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক কনট ন ট ব যবহ র ধরন র সরক র আসক ত

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ