প্রখ্যাত স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম মন্টেগমেরি ওয়াট রচিত মুহাম্মদ অ্যাট মক্কা এবং মুহাম্মদ অ্যাট মদিনা বই দুটি প্রকাশের পর লেখক আবার এই বই দুটি মিলিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে আরেকটি বই রচনা করেন। সেটির শিরোনাম মুহাম্মদ: প্রফেট অ্যান্ড স্টেটসম্যান। এটি ছোট পরিসরে মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কাজের একটি ধারাবাহিক ও বিশ্লেষণধর্মী পরিক্রমা।
এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামি অধ্যয়ন বিষয়ের এমিরেটাস প্রফেসর ওয়াট এ বইয়ের দশটি মূল অধ্যায়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.
বইটিতে লেখক মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও কর্ম তথা ইসলামের অভ্যুদয়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকে বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। এখানে বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি বিবরণ ও বর্ণনা বাদ দিয়ে তিনি পর্যালোচনায় জোর দিয়েছেন, যেন মানব ইতিহাসের এক মহত্তম ব্যক্তিত্বের অর্জনগুলো নির্মোহভাবে উঠে আসে।
আরও পড়ুনআন্দালুসের ইতিহাসে নতুন আলোকপাত২০ এপ্রিল ২০২৪এই ইতিহাসবিদ কোরআনকে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীর প্রাথমিক উৎস হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটা সমসাময়িক ও নির্ভরযোগ্য। তবে ঐতিহাসিক বিবরণী হিসেবে এর ধারাবাহিকতা অবিচ্ছিন্ন থাকেনি এবং এর অন্তর্নিহিত মর্মার্থ অনুধাবন করা দুরূহ। বরং কোরআন থেকে মোটা দাগে তাঁর জীবনের একটা রূপরেখা পাওয়া যায় মাত্র। এই রূপরেখার বিস্তারিত বিভিন্ন দিক পাওয়া যায় প্রথম দিককার উল্লেখযোগ্য জীবনী, যেমন ইবনে হিশাম সম্পাদিত ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুল এবং আল ওয়াকিদির মাগাজি গ্রন্থে। পাশাপাশি ‘হাদিস’ হিসেবে তাঁর কথা ও কাজের যে সুবিশাল সংকলন পরবর্তীকালে হয়েছে, সেগুলো থেকে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও কর্মের অনেক বিবরণ পাওয়া যায়।
যদিও হাদিসের প্রতি মুসলমানদের আগ্রহের প্রধান জায়গা হলো ধর্মীয় বিধিবিধান ও আচার-আচরণ, মহানবীর জীবনীর বিষয়টি নয়।
আরও পড়ুনইসলামের অভিযাত্রায় দৃষ্টিপাত২৭ এপ্রিল ২০২৪ওয়াট আরও বলেছেন যে পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা এসব মাল-মসলাকেই নির্ভরতার দিক থেকে খারিজ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ এমন অবস্থান নিয়েছেন যে কোরআন ছাড়া আর কিছুই বিশ্বাস করা যায় না (যদিও তাঁরা আবার কৌশলে এই বিশ্বাসকে শুধু মোটা দাগে দেখেছেন)। তাঁদের এসব অবস্থান মেনে নিলে বলতে হয় যে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী রচনা করা সম্ভব নয়। ওয়াট এই ধারণার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন, যা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর এই গবেষণাধর্মী বইয়ে।
মুহাম্মদ: প্রফেট অ্যান্ড স্টেটসম্যান; ডব্লিউ মন্টেগমেরি ওয়াট; অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, লন্ডন, ১৯৬৭
আরও পড়ুনমক্কা নগরের ইতিবৃত্ত ও তারপর০৪ মে ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বকাপে জায়গা করতে বিশ্বকাপজয়ীকে কোচের দায়িত্ব দিল ইতালি
দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যে কতটা গৌরবের আর আনন্দের, সেটা একজন বিশ্বকাপ জয়ের-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়ের চেয়ে আর কে ভালো বোঝাতে পারবেন?
আর এমন ভাবনা থেকেই এবার গানারো গাত্তুসোকে জাতীয় ফুটবল দলের কোচ নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা করা নিয়ে শঙ্কায় আছে। এর আগে খেলতে পারেনি ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে। টানা তৃতীয় আসর যাতে দর্শক হয়ে না থাকতে হয়, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী গাত্তুসোকে দায়িত্ব দিয়েছে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এফআইজিসি।
২০২৬ বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান বাছাইয়ে ইতালি খেলছে ‘আই’ গ্রুপে। পাঁচ দলের গ্রুপ থেকে শুধু শীর্ষ স্থানধারী দলই বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করতে পারবে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দল প্লে-অফে খেলার সুযোগ পাবে। এই মুহূর্তে ‘আই’ গ্রুপে ৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে নরওয়ে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইসরায়েল। ইতালির অবস্থান তিনে, ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহে নরওয়ের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারার পরই এফআইজিসি কোচ লুসিয়া স্পালেত্তিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিদায় নিশ্চিতের পরও সোমবার মল দোবার বিপক্ষে ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়ান স্পালেত্তি, ম্যাচটি ইতালি ২-০ ব্যবধানে জেতে।
নরওয়ে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচের চারটিতেই জেতায় ইতালি এখন চাপে আছে। হাতে এখনো ৬টি ম্যাচ বাকি। তবে শীর্ষস্থানে থাকতে হলে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ তো জিততেই হবে, নরওয়েকেও পয়েন্ট হারাতে হবে। আর এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ইতালি দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন গাত্তুসো।
৪৭ বছর বয়সী গাত্তুসো ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ইতালির জাতীয় দলে খেলেছেন। এর মধ্যে ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সেরা পারফরমারদের একজন ছিলেন। সব ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন, পরে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের অলস্টার একাদশেও। ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ক্লাব সিওনে খেলোয়াড় কাম কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকে গত ১২ বছরে মোট ৯টি ক্লাবের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন গাত্তুসো। যার মধ্যে আছে নিজের সাবেক ক্লাব এসি মিলান এবং ভ্যালেন্সিয়া ও মার্শেই। সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব হাইদুক স্প্লিটের দায়িত্বে ছিলেন, যা গত মাসে পারস্পরিক সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোচ হিসেবে মোট ৩৭৬টি ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে গাত্তুসোর জয়ের হার ৪২.৮২ শতাংশ। জিতেছেন ১৬১টিতে, ড্র ১০৮ আর হার ১০৭-এ।
এখন দেখার বিষয়, ইতালি দলে তার সাফল্যের হার কতটা হয়, বিশেষ করে যখন দলের দরকার শতভাগ জয়। ইতালি জাতীয় দল তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে ৫ সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়ার বিপক্ষে।