গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সৌদি আরবে আনন্দ ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠান থেকে আটক ১২ প্রবাসী বাংলাদেশির মুক্তির দাবি করা হয়েছে।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মুক্তি দাবি করে তাদের পরিবার। ঈদুল ফিতরের আগেই তাদের ফেরত চান পরিবারের সদস্যরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সৌদি আরবে আটককৃত ইসমাইল হোসেনের বড় ভাই আহসান উল্লাহ।

সৌদি আরবের জেলে আটক ১২ জন হলেন- মো.

বাদল, ইসমাইল হোসেন, মো. কাউসার হোসেন স্বপন, এরশাদ, জুয়েল রানা, মো. শাকির হোসেন, মো. হাবিবুর রহমান, মো. আবুল হোসেন, মোহাম্মদ জামিল হোসাইন, মোহাম্মদ ইয়াকুব, সাদ্দাম হোসাইন ও মাসুদ গাজী। 

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা আনন্দ ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠান করে। সেখান থেকে ১২ জনকে আটক করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সৌদিতে আটক ১২ বাংলাদেশিদের মুক্ত করতে সরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবহেলা করছে। তাই এখন পর্যন্ত জেল থেকে তারা ছাড়া পায়নি। এ সময় রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মুক্ত করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করে ভিকটিমদের পরিবার।

আহসান উল্লাহ বলেন, আটক ১২ জনের মুক্তি দাবিতে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করা হয়েছে। আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও তাদের মুক্তির কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের বন্দি হওয়ার ফলে একদিকে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবারগুলোর সদস্যরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, তাদেরকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানোর পরও সেখানকার রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও রাষ্ট্রদূত আওয়ামী দোসর হওয়ায় নিরবতা পালন করছেন।

তাদের মুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রবাসী উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংশ্লিষ্টরা যদি উদ্যাগ গ্রহণ করে, আমরা বিশ্বাস করি, ঈদের আগেই তারা পরিবারের কাছে ফিরবে। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, বাংলাদেশে বর্তমানে জাতিসংঘের মহাসচিব এক সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছেন। আমাদের উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আজম জামাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আজম জামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাতীয় জনতা ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ তালুকদার সিদ্দিকসহ ১২ প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন পর ব র র ম হ ম মদ উপদ ষ ট আটক ১২

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ