বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিকাভুক্ত না হওয়ায় এবারও টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগ চরমে। বরাবরের মতো তাই বাঁধটির কাজে নিজেরেই মাঠে নেমেছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার ৮২ গ্রামের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে নজরখালী বাঁধের কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্যে টাঙ্গুয়ার পারের উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়ন ও দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের পুরো অংশ এবং তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের একাংশ রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। সেখানে এ চারটি ইউনিয়নের চাষাবাদের জমি প্রায় ২০ হাজার একর। নজরখালী বাঁধের আওতায় রয়েছে সোনাডুবি, তেকুনিয়া, লামারবিল, বালুর ডোবা, গইন্যাকুড়ি, হানিয়া কলমা, হাতিরগাতা, খাউজ্যাউরি, সামসাগর, চটাইন্না, রউয়্যা, রুপাভূই, মুক্তারখলা ও বাগমারা।
নজরখালী বাঁধের ভেতরে ৮২টি গ্রামের চার ইউনিয়নের কৃষকরা অনেক বছর ধরেই সরকারের কাছে দাবি তুলে আসছিলেন নজরখালী বাঁধটি পাউবোর তালিকাভুক্ত করার জন্য। সরকারিভাবে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেওয়ায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে নিজেরাই সেখানে কাজ করছেন। এ কাজের অর্থের জোগান নিশ্চিত করা হচ্ছে চাঁদা তুলে। এ বছরও কৃষকরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে টাকা উঠিয়ে বাঁশ, চাটাই ও বস্তা সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ কাজে নেমেছেন।
নজরখালী বাঁধে লোকজন নিয়ে কাজ করছেন দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওর গ্রাম উন্নয়ন রংচি কমিটির সভাপতি কৃষক আব্দুল হাই।
এ বিষয়ে তিনি জানান, মধ্যনগর উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়ন ও দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের পুরো অংশের জমি রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওরটি রামসার সাইট হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নজরখালী বাঁধে কাজ করে না। এ অবস্থায় জমির ফসল বাঁচাতে প্রতিবছর কৃষকদেরই বাঁধের কাজ করতে হয়। কিয়ার প্রতি (৩০ শতকে এক কিয়ার) ৩০০ টাকা হারে কৃষকরা চাঁদা সংগ্রহ করেন। ১০ লাখ টাকা বাজেটে কাজ শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। বাঁশ সেটিং করে মাটি ফেলা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বর্তমানে বাঁধের কাজ প্রায় ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে এ বাঁধের কাজ করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করেও নজরখালী বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আনা যায়নি।
নজরখালী বাঁধসংলগ্ন গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খসরুল আলম জানান, শুক্রবার থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের কাজ শুরু করেছেন কৃষকরা। ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর সপ্তাহ খানেক কাজ করলেই বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত না থাকায় তাদের পক্ষে এ বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
তাহিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর যেহেতু রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু এ হাওরের অভ্যন্তরে সব ধরনের কৃষিকাজ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। নজরখালী বাঁধটি এ কারণেই পাউবোর প্রকল্পের আওতায় নেই। ভবিষ্যতেও এটিকে সরকারিভাবে আমলে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ওর ক জ কর উপজ ল ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে