Samakal:
2025-11-03@19:18:49 GMT

প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ

Published: 15th, March 2025 GMT

প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ

অধিকার প্রতিষ্ঠার নানা স্তর-স্তরায়নের কাঠামোগত প্রক্রিয়ার মধ্যে পৃথিবীর প্রযুক্তিকালের এ সময়ে শারীরিক নারী অস্তিত্বের অবস্থানসূত্রে দাঁড়িয়ে নির্ণীত হচ্ছে অধিকারের গ্রন্থিসূত্র। নানা পাল্লায় নির্ণীত হচ্ছে নারীর অবস্থান এবং একক অবস্থানে থেকে নারীর অবস্থানগত পীড়ন। বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকারিক দৃশ্যপট সামগ্রিক অর্থে উঠে আসছে না। এ ক্ষেত্রে করণ ও কারণের কোনোটিকেই ক্ষুদ্রপ্রয়াসে বিবেচনা করা কঠিন।
জনসংখ্যার হিসাবে নারীর আনুপাতিক হার বেশি হলেও এ দেশে নারী নানা অবস্থানেই অধস্তন; ফলে কেন্দ্র পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন সার্বিক পরিস্থিতিতে বিবেচনায় আনে না। যদিও অবস্থানের গুণগত কাঠামোর দিকটি প্রান্তিক নারীর অবস্থানকে সমানুপাতিক না হলেও, পরিবর্তনের সমান্তরাল চিত্রটি তুলে ধরছে।
বিশ্বায়নের যুগে ‘নারী’ শব্দটি একটি বহুল প্রেক্ষিতে বারবার সামনে এসেছে নারীর উন্নয়নের প্রশ্নে। যদিও দুটি বিষয় বিচারের সমীকরণ ভিন্নগতির। এ ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতার বিষয়টি প্রাধান্য পায় নারীকে প্রান্তে রেখে; কেন্দ্রে অবস্থানকৃত পুরুষতন্ত্রকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা নারীর অবস্থান সর্বদাই সেখানে অধস্তন। অধঃস্তন থেকে স্বল্পসংখ্যক নারীর ঊর্ধ্বতন অবস্থানে চলে আসায় পৃথিবীর ইতিহাস একটি পরিক্রমাকাল। এ পরিক্রমাকালীন ইতিহাসের বিভিন্ন জরিপ সংখ্যায় চিত্র নানা সময় তৈরি করা হয়েছে। এসব সমীকরণে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বিষয়গুলোর মতো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাঠামোগত বিষয়গুলো সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে; যদিও রাজনৈতিক ও ক্ষমতার সাংগঠনিক কাঠামোগত বিষয়টি নির্ধারিত হলে উন্নয়নের বিষয়টি ত্বরান্বিত হওয়া হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
নারী বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘকালের। বিশেষত বিরাজমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজকাঠামো নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং সমমর্যাদার অবস্থান তৈরির বাধা এবং এটি কোনো ট্যাবু নয়। বিপরীতক্রমে দেখা যায়, পরিবর্তনশীল সমাজ কাঠামোর পরিক্রমায় নারীর অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটছে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রতিক্রিয়ায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীদের মতোই বাংলাদেশের নারীরা ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের দিক থেকে; কিন্তু সীমিত সে আনুপাতিক হারের চিত্র ও অবস্থান পিছিয়ে পড়া নারীর জন্য কতটা ইতিবাচক তা প্রশ্নসূচক। 
বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক ধর্মীয় আবহে নারী প্রসঙ্গটি ছিল পর্দা অথবা গৃহবন্দি আবহে। এই আবহের মধ্যে প্রথম বেরিয়ে আসার প্রবণতা হিন্দু সমাজের, যদিও কেবল প্রথা ভেঙে সে সময় বেরিয়ে আসাটাই ছিল প্রবল বিরুদ্ধতার কাজ। সতীদাহ প্রথা বিলোপ আর বিধবা বিবাহ প্রচলনের দাবিও মাত্রই বিষয়টি সচেতনভাবে প্রবল অসচেতনতার চিত্র হাতে তুলে ধরে। সমান্তরালে পর্দাপ্রথা, পারিবারিক অবরোধ ভেঙে মুসলিম নারীদের বাইরে আনার ব্যাপারটি বাংলাকেন্দ্রিক এই যাত্রার পুরোধা একজন নারীর। এটি অত্যন্ত সচেতনভাবেই ঘটেছে। ঔপনিবেশিক আবহে জাতিগত পরিচয় প্রাপ্তি এবং মুক্তির চালচিত্র প্রতিষ্ঠার সমন্বয়বাদী সামাজিক প্রচেষ্টায় নারীর অংশগ্রহণ পরিপূর্ণ নিশ্চিত না হলেও চোখে পড়ার মতো এবং এটি পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ। একটি জাতিরাষ্ট্রের ভাবনায় রাজনৈতিক অধিকারজনিত এ সমন্বয় সূত্রটি প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সার্বিক উন্নয়ন যে কতটা ব্যবহৃত তা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপর আমরা টের পাই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.

মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা উচ্চশিক্ষিত হয়েছি ঠিক, কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয়নি।’ একই সঙ্গে নারীর পোশাকের বিষয়ে তিনি বরং ভিন্নমাত্রা যুক্ত করে বলেন, ‘আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীরা বরং পেশাগত পোশাক পরিধানে এখনও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি।’ যেটি খুব জরুরি বলে তিনি মনে করেন। 
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এ দেশে নারীর রাজনৈতিক আন্দোলনের যাত্রাপথে একটি মাইলফলক। এ পর্যায়ে নারীরা নির্যাতিত হওয়ার সংখ্যাটি যেমন দৃশ্যমান, তেমনি ছিল নারীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ। কখনও সরাসরি, কখনও পরোক্ষে, কখনও আড়ালে। নারীশক্তির প্রয়োজন এ সময়ে পর্যায়ভুক্ত হতে পারে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। ১৯৭২ সালের প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ১০, ২৭, ২৮ (১, ২, ৩, ৪), ২৯(১), ৩২, ৬৫(৩) ধারায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম নারীর সমতাবিষয়ক স্বীকৃতি পাওয়া যায়। 
রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রধারায় নারীর অংশগ্রহণ ও তাঁর প্রতিনিধিত্বকেন্দ্রিক নারীর অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে পারিবারিক অবস্থান থেকে। যেটি মধ্যবিত্তীয় নারীর ক্ষেত্রে কেবল যাত্রা শুরুর কাল কিংবা সর্বোচ্চ প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের বাহ্যিক চিত্র একটি বিচিত্রাকার প্রাণীর মতো। স্পর্শে যার অস্তিত্ব একটি বহুমাত্রিক নারীর জীবনপ্রবাহ, পারিবারিক অবস্থান সামাজিক স্তরায়ণ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে শিক্ষার সঠিক চিত্র নানাভাবে জড়িত। প্রতিটি স্তরীভূত সামাজিক বিক্রিয়ার সমন্বয় ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গনে নারীর স্বল্পসংখ্যক অবস্থান দৃশ্যত মূল্যায়ন করা হলেও অবস্থানগত মূল্যায়ন জরুরি। বিগত সময়ে সরকারপ্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নারীরা অবস্থান করলেও, সঠিক ও গুণগত অবস্থান এখনও মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। সুতরাং নারীর অধিকারে তখনই সঠিক উপাদানের সফল বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে, যখন একটি ক্ষমতাকাঠামো ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি স্তরে নারী যথার্থ অর্থেই ক্ষমতায়িত হবে। বাংলাদেশের সব অঙ্গনে প্রত্যাশিত ক্ষমতায়নের দৃশ্যপট বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে নারী কেন্দ্রের ক্ষমতায়ন নয়, বরং প্রান্তের নারীর কাছেও পৌঁছে যাবে। বেগম রোকেয়ার ‘উদ্ভট শকট’ কিংবা ‘গোলাপ লতিকায় কাঁঠালের’ কথা তো সবাই জানি; জানি না কেবল পড়শী বাড়ির প্রান্তিক নারী কেমন আছে। জানতে হবে– কেননা সমতারও সমতা প্রয়োজন। v
লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র র অবস থ ন ক অবস থ ন র জন ত ক ক ষমত য় গ রহণ ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ