টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে অবৈধ বালুর স্তূপ করা হয়েছে। বিএনপি নেতা হাসমত আলীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
হাসমত আলী উপজেলা তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক ও নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি। স্তূপ করার ফলে বালু স্কুলের মাঠ ও বারান্দায় প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক স্কুল মাঠ ও এর আশপাশে বালু স্তূপ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে হাসমত আলীর নেতৃত্বে নিকরাইলে বালুর ঘাট দখল করে ব্যবসা করা হচ্ছে। ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে এবং বাল্কহেড দিয়ে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ অংশ থেকে বালু এনে স্তূপ করে বিক্রি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুল ঘেঁষে অবৈধ বালুর ঘাট করা হয়েছে। বালু স্কুলের শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ ও বারান্দায় প্রবেশ করে। একটু বাতাস এলেই নাক-মুখ দিয়ে বালু ঢোকে। শিক্ষকদের বলেও কোনো লাভ হয় না। বালুর কারণে ক্লাস করা সম্ভব হয় না। তারা এই অবৈধ বালু ঘাট দ্রুত অপসারণ চায়। এছাড়া এক্সক্যাভেটর দিয়ে সারাদিন ট্রাকে বালু তোলা হয়। ভেকুর বিকট শব্দে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারে না।
প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, স্কুলের পাশে যেখানে জমি ভাড়া নিয়ে তারা বালু স্তূপ করেছে, ওই জায়গা স্কুলের নয়। আগে আওয়ামী লীগের নেতারা বালু স্তূপ করে স্কুলের ক্ষতি করেছেন, এখন বিএনপি নেতারা করছেন। বিএনপি নেতা হাসমত আলী প্রভাবশালী লোক। তাঁকে অনেকবার স্কুল ঘেঁষে বালুর স্তূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু তিনি শুনছেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, স্কুল ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে হাসমত আলীর এ অবৈধ বালুর ঘাট বন্ধে একাধিবার বলা হলেও প্রতিকার মেলেনি। যারাই এ বালুর ঘাট বন্ধে প্রতিবাদ করেন, অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেন।
হাসমত আলী জানান, স্কুলের কোনো ক্ষতি হোক, তা তারা চান না। এই বালুর ঘাটে তিনি ছাড়াও স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জড়িত। দ্রুতই বালু অপসারণ করা হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তাঁকে বাধা দিলেই আমি জড়িত রয়েছি বলে চালিয়ে দেন। কিন্তু সত্য হলো আমি বালু ব্যবসা ও স্তূপের সঙ্গে জড়িত নই।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম জানান, বালুর ঘাট ও স্কুল দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অব ধ ব ল স ত প কর ব যবস ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।