ঈদের ইত্যাদিতে এবারও বিদেশিদের জমকালো উপস্থিতি
Published: 16th, March 2025 GMT
প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়মিতভাবে ইত্যাদিতে তুলে ধরছেন বরেণ্য নির্মাতা হানিফ সংকেত। শুরুর দিকে বিষয়টি ১০/১২ জন বিদেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে কখনও কখনও শতকের ঘরেও পৌঁছে যায়। আর এই বিদেশিদের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। বিদেশিদের নিয়ে তাদের মাতৃভাষার বদলে বাংলা ভাষায় গ্রামের সহজ সরল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিয়ে তুলে ধরা হয় বাংলা লোকজ সংস্কৃতি, গ্রামীণ কুসংস্কার, বিভিন্ন অসঙ্গতি, সামাজিক সমস্যা, গ্রামীণ খেলাধুলা ইত্যাদি। এসব ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে চমৎকার একটি বক্তব্যের মাধ্যমে। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রতি ঈদেই হানিফ সংকেত বিদেশিদের নিয়ে এই পর্বটি করছেন।
তাই ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিদের কাছে হানিফ সংকেত ও ইত্যাদি দু’টি প্রিয় নাম। এ দেশে না থাকলেও বিদেশিরা তাদের বন্ধু-বান্ধব ও নূতন সহকর্মীদের ইত্যাদির এই পর্বটির ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। বিদেশিরা মনে করেন এটি তাদের জীবনে একটি নূতন অভিজ্ঞতা, অন্যরকম আনন্দ। যা মানুষকে সচেতন করতে ভ‚মিকা রাখে। তাই তারা উৎসাহের সঙ্গে এই পর্বটির জন্য অপেক্ষা করেন এবং অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া ইত্যাদি প্রচারের পর ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা বিদেশিরা বাইরে বের হলে দর্শকরা যখন তাদের চিনতে পারেন, তাদের করা চরিত্র নিয়ে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেন-তখন তাদের ভালো লাগে। একটি অনুষ্ঠানের ছোট্ট একটি পর্বে স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতে তাদের এই পরিচিতি তাদেরকে বিস্মিত করে, আনন্দিত করে।
এবারের পর্বে অংশগ্রহণ করেছেন জাপান, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, চীন, সুইডেন, রোমানিয়া, ডেনমার্ক, ইন্দোনেশিয়া, প্যারাগুয়ে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। যারা এ দেশে বিভিন্ন দূতাবাস ও বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিদেশিরা তাদের ছুটির দিনগুলোতে ইত্যাদির জন্য মহড়া করেন। বিদেশিদের নিয়ে এবারের ঈদে হানিফ সংকেত নির্মাণ করেছেন গুজব নিয়ে একটি চমৎকার নাটিকা।
‘গুজব’ মানে হচ্ছে ‘অপতথ্য’, অর্থাৎ অযাচাইকৃত তথ্য। যা দিনকে রাত করে, সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে দেয়, নিশ্চিত বিষয়কে অনিশ্চিত করে দেয়। একটি পরিবারের মধ্যে গুজব ছড়ানোর কারণে সম্পর্কে টানাপোড়েন, পারিবারিক কলহ এবং মানসিক অশান্তি হতে পারে। সামাজিক স¤প্রীতি ও সংহতি ব্যাহত করতে পারে। গুজবের কারণে সম্পর্কের এই টানাপোড়েন নিয়েই করা হয়েছে এবারের বিদেশিদের পর্ব। পাশাপাশি বরাবরের মতই রয়েছে বিদেশিদের অংশগ্রহণে একটি গানের সাথে অসাধারন নৃত্য।
বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে হানিফ সংকেত বলেন-‘ওরা অপেশাদার তবে অনেক পেশাদার শিল্পীরও ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে বিদেশিদের সময়জ্ঞান, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে বিদেশিদের সাথে যে আত্মীক বন্ধন তৈরি হয় তা কখনোই ভোলার নয়। আশাকরি প্রতিবারের মত এবারও এই পর্বটি দর্শকদের অনেক আনন্দ দেবে।’
প্রতিবারের মত এবারও ঈদের বিশেষ ইত্যাদি বিটিভিতে প্রচারিত হবে ঈদের পরদিন রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। স্পন্সর করেছে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল