অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দেশের মাটিতে পা রাখলেন হামজা চৌধুরী। সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ‘ওয়েলকাম টু মাদারল্যান্ড হামজা’—এমন সব স্লোগানে মুখর ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী।
গত ডিসেম্বরেই ফিফা থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন হামজা। এরপর থেকেই দেশের ফুটবল অঙ্গনে তাকে ঘিরে তৈরি হয় ব্যাপক উন্মাদনা। সেই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হয় যখন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভারত ম্যাচের প্রাথমিক স্কোয়াডে রাখেন তাকে। এখন চূড়ান্ত দলে হামজার থাকা একপ্রকার নিশ্চিত।
ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলে সরাসরি সিলেটের বিমানে ওঠেন হামজা। বাংলাদেশ সময় রাত দু’টায় বাংলাদেশ বিমানের ম্যানচেস্টার থেকে সিলেট ফ্লাইটে রওনা হন হামজা। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে রওনা দেন নিজ গ্রামের উদ্দেশে—হবিগঞ্জের স্নানঘাটে।
হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে এয়ারপোর্টে বাফুফের ৭ জন নির্বাহী সদস্য রয়েছেন। গতকাল চার সদস্যের সঙ্গে আজ যোগ দিয়েছেন আরও তিন সদস্য। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পরপরই হামজাকে বরণ করে নেন বাফুফে কর্তারা। তাদের সাথে রয়েছেন হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী। হামজা আগেও বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এবারের আসাটা বিশেষ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলোয়াড় হয়ে দেশে আসছেন তিনি। স্মরণীয় এ সফরে তার সঙ্গী মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা।
সিলেট ব্যুরো থেকে মুকিত রহমানী জানান, বিমানবন্দরে হামজাকে অভ্যর্থনা জানাবেন সিলেটের ক্রীড়ানুরাগী ও ক্ষুদে ফুটবলাররা। হামজার আগমন সামনে রেখে গতকাল সিলেট বিমানবন্দর সড়কসহ তার গ্রামের বাড়িতে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সিলেটে কোনো কর্মসূচি নেই, হবিগঞ্জের বাহুবলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে হামজাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাকে এসকট করে নগরী পার করে দেওয়া হবে। একইভাবে জেলা পুলিশও সড়কে তার নিরাপত্তা দেবে।
হামজার আগমন ঘিরে নিজ গ্রাম স্নানঘাটসহ পুরো জেলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী জানান, সাজসাজ রব পড়েছে হামজার নিজ গ্রামে। তাকে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নিজ এলাকার কৃতী সন্তানকে বরণ করতে প্রস্তুত গ্রামবাসী।
শান্ত ও নম্র স্বভাবের হামজা খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন ছড়িয়েছেন খ্যাতি, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। তাই তো হামজাও দিচ্ছেন তাদের আস্থার প্রতিদান। গ্রামের বাড়ি স্নানঘাটে গড়ে তুলেছেন একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা। যেখানে পড়াশোনা করছে এতিম শিশুরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর পর দেশে আসছেন হামজা চৌধুরী।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ভাত-গরুর মাংস তাঁর প্রিয় খাবার। দেশি সবজিও তার পছন্দের। হামজার খাবারের তালিকায় বেশ কয়েক ধরনের মাংস পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানান তারা। আর রাতে ঘুমাবেন পৈতৃক ঘরে। এ বিষয়ে সফর আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সন্তান দেশের জার্সি গায়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের। তার আগমন ঘিরে আমরা উচ্ছ্বসিত, বিশেষ করে তরুণরা তাকে একনজর দেখার জন্য বিশেষ আগ্রহে বসে আছেন। হামজা যখন ছোট সময়ে বাড়িতে আসতেন, তখন আমিও তাঁর সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর টান ছিল।’ শুধু হামজা নন, তার মতো আরও প্রবাসী ফুটবলারের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখতে চান হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী।
আগামীকাল ঢাকায় আসতে পারেন হামজা। এরপর যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হবে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এই মিডফিল্ডারের। ২০ মার্চ বাংলাদেশ দল রওনা দেবে শিলংয়ের পথে, আর এর আগে ১৮ মার্চ কোচ কাবরেরা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করবেন অধিনায়ক ও হামজাকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।