আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে অভিযুক্ত ভেনেজুয়েলানদের বহিষ্কার করলো যুক্তরাষ্ট্র
Published: 17th, March 2025 GMT
আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাংয়ের অভিযুক্ত সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউজ নজিরবিহীন এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্টের কাজে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা একজন বিচারকের নেই।
সোমবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেছেন, মার্কিন ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কৃত বিদেশি সন্ত্রাসী বহনকারী উড়োজাহাজের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো অধিকার একজন বিচারকের নেই।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবার কথা বলবেন ট্রাম্প
হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
ভেনেজুয়েলান অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার দুই শতাধিক অভিযুক্ত সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত বিতারিত করার জন্য গত শুক্রবার কয়েক শতকের পুরোনো ভিনদেশি শত্রু আইন বা এলিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি যুদ্ধকালীন আইন হিসেবে পরিচিত।
তবে পরদিন ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারক জেমস বোসবার্গ ১৭৯৮ সালের ওই ভিনদেশি শত্রু আইনের ব্যবহার ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তার বক্তব্য ছিল, এই আইনে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে’ বোঝানো হয়েছে, যা ‘যুদ্ধের সমতুল্য’।
একজন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতিতে বিচারবিভাগ চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না দাবি করে রবিবার (১৬ মার্চ) হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেছেন, স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কোনো আইনি এখতিয়ার নেই।
রয়টার্স বলছে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মার্কিন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানালেন ট্রাম্প।
এই বিষয়ে ক্যাট ইনস্টিটিউটের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও নাগরিক অধিকার বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক এডিংটন বলেছেন, হোয়াইট হাউজ যেভাবেই পুরো বিষয়টা উপস্থাপনের চেষ্টা করুক না কেন, তারা যে বিচারকের আদেশ সরাসরি অগ্রাহ্য করেছে, এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মার্কিন সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য উপেক্ষা করার এমন নজির গৃহযুদ্ধের পর আর দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের এল সালভাদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অন্য দেশের অপরাধীদের এল সালভাদরের কারাগারে রাখার জন্য গত মাসে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হয়েছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকের নির্দেশ নিয়ে কিছুটা ঠাট্টার সুরে বলেছেন, ‘উফ.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্র বুকেলে আরো বলেছেন, আটককৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে এল সালভাদরের কুখ্যাত মেগা-জেল টেরোরিজম কনফাইনমেন্ট স্টোরে (সেকোট) স্থানান্তর করা হয়েছে। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তাদের ‘এক বছরের জন্য’ সেখানে রাখা হবে এবং এটি ‘নবায়নযোগ্য’ হতে পারে।
রবিবার (১৬ মার্চ) আদালতে দাখিল করা একটি নথিতে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, বিচারকের আদেশের আগেই ‘কিছু’ বিতারিতদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, আদালতের আদেশটি আমলে নেওয়া হয়নি, কারণ ফ্লাইটগুলো ইতিমধ্যেই ‘আন্তর্জাতিক জলসীমার উপর দিয়ে’ ছিল।
তবে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাদেক বলেছেন, একটি ফেডারেল আদালতের ক্ষমতা জলসীমায় আটকে থাকে না। প্রশ্ন হলো, আসামিরা আদালতের আদেশের অধীন কিনা, যেখানে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে সেই আচরণটি সংঘটিত হয় না।
কার্ডোজো ল স্কুলের অধ্যাপক এবং অভিবাসন প্রয়োগকারী বিশেষজ্ঞ পিটার মার্কোভিটজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ আদালতের আদেশ ‘স্পষ্টতই লঙ্ঘন’ করেছে।
আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে কোনো অভিবাসীকে অপসারণ করেনি, ট্রাম্প প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে বলেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)।
এসিএলইউ-এর প্রধান আইনজীবী লি গেলার্ট রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আদালতের আদেশের পরে যদি কাউকে কোনো বিদেশি সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে আমরা আশা করব যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই বিদেশি সরকারের সঙ্গে কাজ করে ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনবে।”
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র র জন য বল ছ ন ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ