শুরুটা হয়েছিল জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে আবির্ভাব ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। দীর্ঘ ছয় বছর পর দ্বিতীয় প্রবাসী হিসেবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ান তারিক রায়হান কাজী। গত বছর কানাডা প্রবাসী সৈয়দ শাহ কাজেমের সঙ্গে বড় নাম ইংলিশ লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজার সঙ্গে পঞ্চম প্রবাসী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ইতালিতে বেড়ে ওঠা ফাহমিদুল ইসলাম। আজ ইংল্যান্ড থেকে সিলেটে আসছেন হামজা। বাংলাদেশের ফুটবলে একসঙ্গে পাঁচ প্রবাসী। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপনই বলা চলে। সেই পাঁচ প্রবাসী নিয়ে সমকালের আয়োজন…

ইংলিশ লিগ থেকে হামজা দেওয়ান চৌধুরী: বাবা: মোর্শেদ দেওয়ান চৌধুরী, মা: রাফিয়া চৌধুরী। চার-পাঁচ বছর ধরে প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে নিয়ে কাজ করে আসছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ইংলিশ ক্লাব লিস্টার সিটিতে খেলার সময় এ ডিফেন্ডার জড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ড যুব দলের জার্সি। বড় ক্লাবে খেলার সঙ্গে ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাঠ মাতানো হামজাকে পেতে সব চেষ্টায়ই করে আসছিল বাফুফে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে লিস্টার সিটি, ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে ছাড়পত্র মেলে তাঁর। কিন্তু মূল ছাড়পত্র বাকি ছিল ফিফার। অনেক চিঠি চালাচালির পর গত বছর বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি দেয়। সবকিছু ঠিক থাকলে হামজা চৌধুরীর মতো একজন গ্লোবাল স্টারের ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হবে। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এ ডিফেন্ডারের আজ সিলেটে আসার কথা। হামজার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি। তাঁর নানার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নে। হামজা একজন ক্যারিবিয়ানের সন্তান। মা রাফিয়া চৌধুরীর বিয়ে হয়েছিল একজন্য ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে। কিন্তু সেখানে তার সংসার করা হয়নি রাফিয়া চৌধুরীর। পরে দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে হামজার মায়ের বিয়ে হয়। তাই তিনি হামজার বায়োলজিক্যাল সন্তান নয়। হামজা ছাড়াও দেওয়ান মোরশেদের ঘরে আরো তিন সন্তান রয়েছে।

শিকড়ের টানে জামাল ভূঁইয়া: বাবা: ইনসান ভূঁইয়া, মা: রাজিয়া আক্তার। ২০১৩ সালের আগে অনেক প্রবাসী বাফুফেতে ট্রায়াল দিয়েও পাস করতে পারেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়াও। ডেনমার্কে থাকা অবস্থায় লাল-সবুজের জার্সি গাঁয়ে জড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। ২০১১ সালে বাংলাদেশে ট্রায়াল দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ডেনমার্কে। কারণ মানিয়ে নিতে পারেননি বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে। ২০১৩ সালে আবার এসে ট্রায়ালে সবার মন জয় করে নেন। প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছিলেন ওই বছরের ৩১ আগস্ট নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ মিডফিল্ডারকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টারবয়। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গোল করে এবং করিয়ে আলোচনায় এসেছেন জামাল।

ইতালি থেকে ফাহমিদুল ইসলাম: প্রবাসী হামজা চৌধুরীকে নিয়ে যখন আলোচনায় পুরো দেশ, তখন বড় চমক হয়ে আসে ইতালি প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামের নাম। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার প্রাথমিক দলে প্রবাসী ফাহমিদুলের অন্তর্ভুক্তিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে বাফুফে গোপনীয়তা অবলম্বন করে। ফাহমিদুলের বেড়ে ওঠা ফেনীতে। তিনি ইতালির সিরি’এ ডি লিগের ক্লাব ওলবিযা ক্যালসিওর হয়ে লেফট ব্যাক এবং লেফট উইং ব্যাক পজিশনে খেলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সৌদি আরবের ক্যাম্পে আছেন ফাহমিদুল। ইতোমধ্যে দলের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরেছেন।

ক্রিকেটার বাবার ছেলে সৈয়দ শাহ কাজেম: বাবা: হালিম শাহ। নব্বই দশকে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ হালিম শাহ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো করলেও কখনোই জাতীয় দলে খেলা হয়নি তাঁর। তবে ক্রিকেটার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন সৈয়দ শাহ কাজেম। তিনি ক্রিকেটার হননি, হয়েছেন ফুটবলার। এরই ধারাবাহিকতায় কানাডা প্রবাসী এই ফুটবলার বাংলাদেশের জার্সি গায়েও জড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান হালিম শাহ। সেই সময় কাজেমের বয়স ছিল ৭। প্রথমে ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন ছিল হালিম শাহর। কিন্তু কানাডার টরন্টোতে ফুটবলই ছিল প্রথম দর্শন। ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন কাজেম। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলে বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০২১ সালে ঢাকায় ফিরে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে ক্যারিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলেন। পাসপোর্টসহ অন্যান্য জটিলতায় তখন খেলা হয়নি। পরের মৌসুমে পুলিশ এফসির হয়ে খেলা শুরু কাজেম শাহর। ঘরোয়া লিগে পারফরম্যান্স করার পুরস্কার হিসেবে কাজেম এখন জাতীয় দলেরও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল ল ল সব জ র জ র স দ শ র ফ টবল ফ টবল র প রব স প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন