১৬ বছর ধরে বিএনপি যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠন তারই ফলাফল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

আজ মঙ্গলবার বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক দোয়া ও স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি ফাউন্ডেশন এই সম্রণসভার আয়োজন করে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সংস্কারের নামে কোনো টালবাহানা নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এটাই মানুষের প্রত্যাশা। এই সরকার ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দিয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। মানুষ অধিকার বলতে ভোটের অধিকারকে বোঝে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী শাসনামলে যাঁরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারেও তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, যেই কর্মকর্তা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়েছিলেন, তিনি এখন দাপটের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।

মানুষ এখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো সংস্কার চায় না বলে দাবি করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে এর বেশি কিছুই চায় না মানুষ।’

জয়নুল আবদিন ফারুক আরও বলেন, গত ১৬ বছর তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তারই ফল; কিন্তু সংস্কারের নামে যা হচ্ছে, সেটি বিএনপিকে নিয়ে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র।

স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ (অব.

) ইফতেখার হোসেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খোন্দকার দেলোয়ারের বড় ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক শামিমুর রহমান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র

কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সরকারকে গ্রেপ্তার করেছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নে পীর কাশিমপুর গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শাহ আলম একই এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা মেলায় শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ওই তিন খুনের মামলায় এজাহারনামীয় আসামি।

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর স্বীকারোক্তি দেননি ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’০৬ জুলাই ২০২৫

তবে শাহ আলম ওই মামলার প্রকৃত আসামি নন বলে দাবি করেছেন তাঁর ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আজিজ সরকার। তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ বলছে, আমার বাবাকে ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তিনি এজাহারনামীয় আসামি। তবে এ মামলার এজাহারের ২৫ নম্বরে থাকা শাহ আলম নামের আসামির বয়স ৪০ বছর। আর আমার বাবার বয়স ৭০ বছরের বেশি। এ ছাড়া আমার দাদার নাম জানেন না, এলাকায় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে আসামির পিতার নাম অজ্ঞাত রাখা হলো কেন? এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। আমার বাবাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এই মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।’

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনও বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে শুনিনি তিনি (শাহ আলম) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ঘটনার সময় বা আগে-পরের কোনো সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। আমার মনে হয়, কোথাও ভুল হচ্ছে। তাঁকে অযথা গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ বয়সে হয়রানি করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার মামলায় আরও ৬ জন গ্রেপ্তার০৫ জুলাই ২০২৫

ঘটনার সময় শাহ আলম ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পীর কাশিমপুরের শাহ আলম নামের একজন জড়িত বলে যখন জানতে পেরেছি, তখন মামলায় নামটি উল্লেখ করেছি। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি বলে আমি মামলাতে আসামির বাবার নাম অজ্ঞাত রেখেছি। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। আমি কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করতে চাই না। ডিবি পুলিশের তদন্তে যদি তিনি ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে গ্রেপ্তার করুক; না হলে, আমি চাই না কোনো নিরীহ মানুষের হয়রানি হোক।’

ঘটনার প্রায় এক মাস পার হলেও প্রধান আসামি শিমুল বিল্লাহ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিক্তা। তিনি বলেন, ‘শিমুল গ্রেপ্তার না হলে যেকোনো সময় আমার ওপর হামলা হতে পারে, আমাকে হত্যাও করতে পারে। আমি দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার ৩৯ ঘণ্টা পর মামলা, আটক ২০৫ জুলাই ২০২৫

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে শাহ আলমের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলাটির মোট ১০ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৯ আসামি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। নতুন করে গ্রেপ্তার শাহ আলমকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের রোকসানা বেগম (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানার বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আকুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে। তিনি পলাতক আছেন।

আরও পড়ুনমুঠোফোন চুরিকে কেন্দ্র করে খেপিয়ে তোলা হয় এলাকাবাসীকে০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনকুমিল্লায় মাদক বেচাকেনার অভিযোগে মা ও দুই সন্তানকে গণপিটুনি, কুপিয়ে হত্যা০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার
  • ভেনেজুয়েলায় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিরোধীদের প্রতিরোধের ডাক
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র