জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাঁদের বহিষ্কার করেছে, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নন। তাঁদের মধ্যে দুজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং একজন সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী। আর দুজনের নাম থাকলেও তাঁরা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, তালিকায় তার উল্লেখ নেই।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হামলাসংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা করে ১২৮ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে কমিটির প্রতিবেদনে থাকা নামের তালিকাটি আসে।

তালিকায় দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া বাকি পাঁচজন হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসাইন সানিম (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি) ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আকাশ (ছাত্রলীগের সভাপতি) এবং সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী আক্তার হোসেন রুমন। অন্য দুজন হলেন রুবেল খান (পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপজেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী) এবং রিজভী আহমেদ খোকা (বহিরাগত)। আর ১১৯ নম্বর ঘরটি ফাঁকা। সেখানে কোনো তথ্যই নেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, যে দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁরা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইব্রাহিম হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। কিন্তু তাঁর বহিষ্কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন করবে বা কীভাবেই করে, সেই প্রশ্ন তাঁদের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাকছুদুল হক বলেন, ‘আমরা চাই সানিমসহ যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের বিচার হোক। কিন্তু সেটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় হতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সানিম হামলা করেছে, এটা সবাই জানে; কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে কারও বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার্থীদের কীভাবে বহিষ্কার করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে সিন্ডিকেটে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা এ তালিকায় আছে, তাদের বহিষ্কারের অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠানো হবে।’

এদিকে আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকতর তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট সদস্য ড.

তাজমেরী এস এ ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি কর্তৃক চিহ্নিত ১২৮ জনের বিষয়টি আমলে নিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সহিংস ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শিগগিরই তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করবে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্রম ১১৯ নম্বর ঘরটি ফাঁকা, সেখানে কারও নাম–পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু এটার তথ্য পাইনি। কিন্তু আমরা এই তথ্যগুলোও পেয়ে যাব। সামনে আরও তথ্য আসছে। এই তালিকা আরও বড় হবে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল