ঘটনার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। এখন কি তবে রিংয়ের লড়াইয়েই সমাধান?

লোগান পল অন্তত এটাই চান। বক্সিংয়ের রিংয়ে লিওনেল মেসি তাঁর সঙ্গে লড়াই করলে আদালত থেকে মামলা তুলে নেবেন—গত মাসে টিকটকে পোস্ট করা ভিডিওতে এমন কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই পেশাদার রেসলার, বক্সার, ইউটিউবার ও ইনফ্লুয়েন্সার।

এবার লোগানের সেই কথার উত্তর দিলেন মেসির বডিগার্ড ইয়াসিন চুকো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, মেসির বডিগার্ড বলছেন, ‘এই লোকটি কে, লিও তা জানে না। সে যদি সত্যিই লড়াই করতে চায়, তবে আমার সঙ্গে লড়তে পারে।’ কমব্যাট স্পোর্টসের এক্স হ্যান্ডল ‘হ্যাপি পাঞ্চ’-এ ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।

এবার ঘটনাটা শুরু থেকে বলা যাক। ব্যবসায়িক অংশীদার কেএসআইয়ের সঙ্গে ২০২২ সালে ‘প্রাইম’ নামে একটি পানীয় বাজারজাত শুরু করেন লোগান। এরপর মেসিও ‘মাস‍+ৎ’ নামে একটি পানীয়র ব্র্যান্ড গত বছর জুন থেকে বাজারজাত শুরু করেন।

কিন্তু পানীয় দুটির প্যাকেজিং ও ডিজাইন প্রায় একই রকম হওয়ায় আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। লোকে অভিযোগ করেন, পানীয় দুটি কিনতে গিয়ে তাঁরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। এরপর গত অক্টোবরে নিউইয়র্কে এ নিয়ে প্রাইমের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন মেসির আইনজীবীরা। প্রাইমকে ‘অ্যান্টিকম্পিটিটিভ’–এর দোষে অভিযুক্ত করা হয়ে মেসির ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া দাবি করা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্যের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সংরক্ষণের আইন তাঁদের দ্বারা লঙ্ঘিত হয়নি। উল্টো প্রাইমকে নোংরা বিপণন–পরিকল্পনার দায়ে অভিযুক্ত করেন মেসির কৌঁসুলিরা। এক মাস পর লোগানের আইনজীবীরা মেসির ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুকরণের অভিযোগ তুলে পাল্টা মামলা করেন। মামলাটি এখনো আদালতে চলমান।

গত মাসে টিকটকে পোস্ট করা ভিডিওতে লোগান বলেন, ‘ভাই, তুমি আমাদেরটা অনুকরণ করেছ। সবাই দেখেছে তুমি কী করেছ, সবাই খেয়ালও করেছে, তবু মামলা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এটা ন্যায়বিচার নয়। তাই আমি পাল্টা মামলা করেছি। সেরাকে হারাতে না পারলে তোমাকে সেরা হতে হবে। কিন্তু এটা অবৈধ। এটা ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন। আমরা তার কাছে জবাবদিহি চাই আর এটা হয়রানি? এসব কৌতুক বাদ দিয়ে বলছি, আমি এই মামলা তুলে নেওয়ার কথা ভাবব, যদি ২০২৫ সালে লোগান পল বনাম মেসির লড়াই হয়। রিংয়ে তোমার সঙ্গে দেখা হবে, ভাই।’

আরও পড়ুনম্যারাথনে মানুষের সঙ্গে দৌড়াবে রোবটও৪ ঘণ্টা আগে

হ্যাপি পাঞ্চে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, মেসির বডিগার্ড ইয়াসিন একটি জিমের রিংয়ে ওয়ার্কআউট শেষে বসে আছেন। এ সময় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘লোগান পল মেসির সঙ্গে (রিংয়ে) লড়াই করতে চায়, এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?’ প্রশ্নটি শুনে ইয়াসিন পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কে?’ এরপর বলা হয়, ‘ইউটিউবার লোগান পল।’ ইয়াসিন এরপর বলেন, ‘দেখুন, এই লোকটিকে চেনে না লিও। সে যদি সত্যিই লড়াই করতে চায়, তাহলে কোনো ফুটবলারের মুখোমুখি না হয়ে আমার বিরুদ্ধে লড়তে পারে।’ পাশ থেকে একজন ইয়াসিনকে বলেন, ‘তুমি তো ওকে ধ্বংস করে ফেলবে।’

মেসি ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর ইয়াসিনকে বডিগার্ড হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরই ইয়াসিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যান। ৩৫ বছর বয়সী ইয়াসিন আমেরিকান। আমেরিকান বাবা ও ফরাসি মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া ইয়াসিনের উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি।

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম লা নাসিওন এর আগে জানিয়েছিল, সাবেক মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট ইয়াসিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর সাবেক নেভি সিল—আফগানিস্তান ও ইরাকে কাজ করেছেন। যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন জানিয়েছে, নেভি সিলে বর্তমান সদস্যদের কেউ তাঁর নাম শোনেননি এবং নেভি সিল ডেটাবেজেও ইয়াসিনের নাম নেই। সে যা হোক, তায়কোয়ান্দো ও বক্সিংয়ে বিশেষভাবে দক্ষ ইয়াসিন।

আরও পড়ুনমৃত ম্যারাডোনার কক্ষে ‘চিকিৎসার সরঞ্জাম ছিল না’৩ ঘণ্টা আগে

মাঠ ও মাঠের বাইরে মেসি ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইয়াসিনের ৫০ জনের একটি দল আছে। দিন-রাত মিলিয়ে ইয়াসিনকে ২৪ ঘণ্টাই মেসি ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। মেসি যেখানেই যান, সেখানেই আঠার মতো লেগে থাকেন ইয়াসিন। ম্যাচের আগে-পরে তো আছেই, এমনকি শপিং মলেও মেসির সঙ্গে দেখা গেছে তাঁকে। মাঠে কোনো দর্শক দৌড়ে মেসির কাছ পর্যন্ত যেতে চাইলে তাঁকে আগে ইয়াসিনকে টপকানোর পরীক্ষা দিতে হয়।

ইয়াসিন এর আগে হলিউড তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, সেলেনা গোমেজ ও ওয়েন উইলসনের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের লস অ্যাঞ্জেলেসে আসা উপলক্ষে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবেও কাজ করেছেন।

লোগান পল রেসলার হিসেবে ২০২২ সালে ডব্লুডব্লুইয়ের সঙ্গে চুক্তি করেন। খণ্ডকালীন রেসলার হিসেবে তাঁকে সেখানে দেখা যায়। ২০২১ সালে ফ্লোরিডায় সাবেক বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদারের সঙ্গে প্রদর্শনী লড়াইয়েও অংশ নেন লোগান। পেশাদার বক্সার ও ইনফ্লুয়েন্সার জ্যাক পল তাঁর ভাই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প স ট কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও টেলিকম কর্মকর্তা বঙ্কিম ব্রহ্মভট্টের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওই জালিয়াতির তিনিই মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এই কেলেঙ্কারির কারণে ব্ল্যাকরকের ঋণ শাখা এবং আরও কয়েকটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী সংস্থার ৫০ কোটি কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কে এই বঙ্কিম ব্রহ্মভট্ট

ব্রহ্মভট্ট বৈশ্বিক টেলিকম-পরিষেবা শিল্পে অপেক্ষাকৃত অপরিচিত দুটি সংস্থা—ব্রডব্যান্ড টেলিকম ও ব্রিজভয়েসের সঙ্গে যুক্ত। দুটি সংস্থাই ব্যাঙ্কাই গ্রুপের অধীনে কাজ করে।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাঙ্কাই গ্রুপ এক্স (পূর্বের টুইটার)-এর একটি পোস্টে ব্রহ্মভট্টকে প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।

এক্সে দেওয়া ব্যাঙ্কাই গ্রুপের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে—‘টেলিকমিউনিকেশন শিল্পে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নেতা, যারা টেলকো, অপারেটর এবং আরও অনেকের সঙ্গে টেলিকম প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার ব্যবসায়িক সৌহার্দ্যকে লালন করে।’

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুসারে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বের টেলিকম অপারেটরদের অবকাঠামো ও সংযোগের সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

মনে হচ্ছে, ব্রহ্মভট্টের লিঙ্কডইন প্রোফাইলটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক মাস আগেও ব্রহ্মভট্ট নিউইয়র্কের গার্ডেন সিটিতে অফিস চালাতেন।

জালিয়াতির ধরন

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ বকেয়া রয়েছে। ব্ল্যাকরকের এইচপিএস ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার্সের নেতৃত্বে ঋণদাতারা তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া চালান ও ভুয়া পাওনা অ্যাকাউন্ট তৈরি করার অভিযোগ এনেছেন। বড় অঙ্কের ঋণের জন্য জামানত হিসেবে ওইসব অ্যাকাউন্ট বানানো হয়েছিল।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল যখন ভারত ও মরিশাসে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তখন তাদের নেটওয়ার্ক কাগজে-কলমে আর্থিক শক্তির একটি মায়াজাল তৈরি করা হয়েছিল।

তবে ব্রহ্মভট্টের আইনজীবী এই জালিয়াতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ঋণদাতারা দাবি করেছেন, ব্রহ্মভট্ট কারিওক্স ক্যাপিটাল ও বিবি ক্যাপিটাল এসপিভির মতো আর্থিক সংস্থার এক জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যা ব্ল্যাকরকের মতো কয়েকটি বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রহ্মভট্ট ভুয়া গ্রাহক চালান তৈরি করেন এবং সেই জাল কাগজপত্র দিয়ে জামানত তৈরি করে তার বিপরীতে ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পরে তিনি ভারত ও মরিশাসে সম্পদ স্থানান্তর করেন। এখন তাঁর দুটি কোম্পানি এবং ব্রহ্মভট্ট নিজে দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করেছেন।

গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্রহ্মভট্টের আইনজীবী কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, জালিয়াতির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত
  • পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডের সেলিম প্রধান রিমান্ডে
  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 
  • সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির আরিফ ও নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আপিল বিভাগের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করলেন নেপালের প্রধান বিচারপতি
  • খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত
  • এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে: কায়সার কামাল
  • ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ