ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত গঠনে সরকারকে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান উদীচীর
Published: 20th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীটি।
বৃহস্পতিবার উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান। এতে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় নতুন করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অমানবিকতা ও নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
উদীচীর নেতারা বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে কয়েক দশক আগে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে গড়ে ওঠা ইসরায়েল রাষ্ট্রটির কোনো বৈধতা নেই। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই ইসরায়েলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তারপরও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং এর দোসরদের সহযোগিতায় ইসরায়েল সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ ভূমি নিজেদের দখলে নিয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর বহুবার নৃশংস হামলা চালিয়েছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর কিছুদিন আগে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব শর্ত লঙ্ঘন করে আবার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, গত কয়েক দিনে যা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে।’
হাসপাতাল, শরণার্থীশিবির এবং বাড়িঘর থেকে শুরু করে কোনো স্থাপনাই ইসরায়েলের হামলা থেকে বাদ পড়ছে না উল্লেখ করে উদীচীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তাদের হামলায় মারা যাচ্ছে নিরীহ শিশু ও নারী থেকে শুরু করে হাজারো মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে ও শুশ্রূষার জন্য হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না অবৈধ রাষ্ট্রটি।’
উদীচীর নেতৃত্ব মনে করে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় বাংলাদেশের তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া উচিত। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)