মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক হাত ইসরায়েল হলে আরেক হাত সৌদি আরব: আনু মুহাম্মদ
Published: 20th, March 2025 GMT
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আরব দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কারণে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতা নিয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে ইসরায়েল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আজকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক হাত যদি হয় ইসরায়েল, তাহলে তার আরেক হাত আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি সৌদি আরবকে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের আয়োজনে সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের শুরু করা গণহত্যা বন্ধে এ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ২৩ মার্চ রোববার সারা দেশে বাম গণতান্ত্রিক শক্তির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাতিসংঘ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা কর্তৃত্ব করছিল, যা এখনো করছে। এ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে প্রতিরোধ হলেই তার শক্তি দুর্বল হবে। তিনি বলেন, ‘এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা দুর্বল না হলে, তার একটা পতন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বের কোনো মানুষ, কোনো অঞ্চল নিরাপদ নয়, তার সম্পদ নিরাপদ নয়, তার জীবন নিরাপদ নয় এবং তারই একটা বহিঃপ্রকাশ আমরা ফিলিস্তিনে দেখতে পাচ্ছি।’
সাম্রাজ্যবাদকে কখনো বিশ্বাস করা যাবে না জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, সাম্রাজ্যবাদকে কখনো ছাড় দেওয়া এবং সাম্রাজ্যবাদের ওপর কখনো ভরসা করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যের কারণে জমিতে, ভূমিতে, আমাদের রাজনীতিতে বিভিন্ন জটিলতায় পড়েছি। এ ছাড়া বাংলাদেশেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নানা আয়োজন এখন চলছে।’
এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, জনগণের অধিকার হরণে যে হস্তক্ষেপ করেছে ভারত, তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মুক্ত করবে। ভারতের আধিপত্য থেকে আমাদের মুক্ত করার কোনো দায় যুক্তরাষ্ট্রের নেই, তার দায় ভারতের সঙ্গে সংহতি রেখে নিজের স্বার্থ এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার নেতা হিসেবে ভারতকে স্বীকার করে, তার প্রমাণ হচ্ছে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য।’
ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক হারুনুর রশিদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।