শাকিলের সাথে সি টু সামিটে পথের সঙ্গী
Published: 21st, March 2025 GMT
‘সি টু সামিট’-এর পথে শাকিল হাঁটা শুরু করেছে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫। ‘সি টু সামিট’ ব্যপারটা খোলাশা করে বলি। সমুদ্র সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট সামিটের পুরোটা পথ হেঁটে যাবে শাকিল। বিশ্বে এখন পর্যন্ত আর একজন ব্যক্তি এই পাগলামি করেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ম্যাকার্টনি-স্নেপ। ১৯৯০ সালে ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। শাকিল বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে এই যাত্রা শেষ করার প্রয়াস করেছে ৯০ দিনে এবং দূরত্ব হবে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ। অর্থাৎ এই পাগলামিটা করতে পারলে শাকিলের এবং বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক হবে বিশ্বদরবারে। এই অভিযান শুধু ভৌগোলিক পথচলা নয়, বরং এক অন্তর্নিহিত প্রতিজ্ঞা, পরিবর্তনের এবং সচেতনতার। সিঙ্গেল-ইউজড প্লাস্টিক দূষণ কমানো ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের বার্তা নিয়ে শাকিল তার দীর্ঘ পথচলা শুরু করেছে।
এটাকে ‘পাগলামি’ বললাম কারণ, আমরা যারা এসব করে বেড়াই আমাদের সমাজের মানুষ ‘পাগল’ বলে আখ্যায়িত করে। সবাইকে সব কিছু করতে হবে না, কিছু লোক পাগলামি করে যদি বিশ্ব রেকর্ড করতে পারে তাহলে পাগলই ভালো। শাকিল তার লক্ষ্যে সফল হলে, এটি হবে পদযাত্রা করে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে এবং সবচেয়ে কম সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড।
কক্সবাজার থেকে হেঁটে হেঁটে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছাল শাকিল। এরপর ৯ মার্চ ‘প্রাণ’র সৌজন্যে প্রেস কনফারেন্স হলো ঢাকার শুটিং ক্লাবে। সেখানে শাকিল তার যাত্রার লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যপারে সবাইকে জানালো। এই কর্ম সম্পাদন করতে যে পাহাড়সম অর্থায়ন প্রয়োজন সে জন্য স্পন্সর ও দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানালো। এখনো এভারেস্ট যাত্রায় শাকিলের অর্ধেক অর্থের ঘাটতি রয়েছে। জানিয়ে রাখি, এভারেস্টে চড়তে হলে নেপাল সরকারকে জমা দিতে হয় পনেরো হাজার ইউএস ডলার।
সব কিছু গুছাতে শাকিল কয়েকদিন সময় নিলো এবং এরপর ঢাকা থেকে হাঁটা শুরু করল। প্রতিদিন যেখানে হাঁটা শেষ হচ্ছে পরদিন সেখান থেকেই আবার হাঁটা শুরু হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে শাকিলের সঙ্গে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত হেঁটে যাচ্ছে মাসফিকুল হাসান টনি। নাটরের ছেলে, মিষ্টভাসী আর বেশ এনার্জেটিক। বছর দুই আগে সে ভোমরা সীমান্ত থেকে হেঁটে বান্দারবানের সাকাহাফং চূড়ায় উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতা বই আকারে প্রকাশ করেছে অদ্রি প্রকাশনী থেকে। কক্সবাজার থেকে কয়েকদিনের পথ হেঁটেছে পর্বতারোহী বিপ্লব ভাইও।
ভোরবেলা তারা সায়েদাবাদ থেকে রওনা দিয়েছে। আজকে যুক্ত হয়েছে একদল অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষেরা। আমি যুক্ত হলাম কারওয়ান বাজার থেকে। পর্বতারোহী সাদিয়া সম্পা আপা শাকিলের এই যাত্রার সব ধরনের আপডেট দিচ্ছেন। সকাল থেকে আপার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের জায়গামত ধরে ফেললাম। আজকে শাকিলের কাজ থাকায় পল্লবীতে গিয়ে এই হাঁটার ইতি টানা হবে। এতোদিন হেঁটে আসার নানা অভিজ্ঞতা, এভারেস্টে যাবার পরিকল্পনা এসব গল্প শুনতে শুনতে আমরা ফার্মগেট, আগারগাঁও হয়ে মিরপুর চলে এলাম।
শাকিলের সঙ্গে সি টু সামিটের অংশীদার হয়ে কিছুদিন হাঁটার পরিকল্পনা করে গতকাল থেকে হাঁটা শুরু করে দিয়েছি। ভোরে পল্লবী থেকে হাঁটা শুরু হলো, গন্তব্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর। দেরি করে ঘুম ভাঙ্গাতে আমি ওদের আশুলিয়া বাজারে এসে ধরলাম। সেখান থেকে কালিয়াকৈর এসে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেল।
আশুলিয়ার রাস্তাটা বেশ বাজে, অতিরিক্ত ধুলা আর গাড়ির শব্দ। আশুলিয়া থেকে আমরা বিকল্প রাস্তায় কালিয়াকৈরের দিকে হাঁটতে থাকলাম। জিরাবো বাজার থেকে আবার মেইন রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলাম। পথে শাকিলের বন্ধু এবং মামার সঙ্গে আমাদের দেখা হলো। দিদার উত্তরা থেকে হাঁটা শুরু করেছিল, চন্দ্রার কাছে এসে সে বিদায় নিলো। চন্দ্রাতে আমরা ইফতার করে আরো পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে কালিয়াকৈর পৌঁছালাম। সাংবাদিক ভাইরা শাকিলের এই পদযাত্রার এবং আমাদের বক্তব্য ধারণ করলেন। শাকিলের এই উদ্যোগের ব্যাপারে তারাও বেশ কৌতূহল নিয়ে সংবাদ প্রচারে ফুল নিয়ে হাজির হয়েছে। শাকিলের পৈতৃক বাড়ি কালিয়াকৈরের বাগচালা গ্রামে। এত কাছে এসে মায়ের মুখ না দেখলে কি হয়! সে যে লম্বা সফরে বের হয়েছে। তাই আমাদের সে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো। রাতটা থেকে ভোরবেলা হাঁটা শুরু হবে।
বছর দুই আগে আমি মির্জাপুর থেকে হেঁটে বাংলাবান্ধা গিয়েছিলাম ১৩ দিনে। তখন সঙ্গে ছিল নেপালি তরুণ ঈ। পথে পথে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছিল এবং নতুন কিছু মানুষকে পেয়েছি যারা আত্মীক বাঁধনে যুক্ত হয়েছে। এবারেও পথ চলতে চলতে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। এ ছাড়া পথের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। টনি আর শাকিলের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছে। শাকিল নেপালে ট্র্যান্স হিমালয় শেষ করেছে আর টনি ভোমরা থেকে সাকা হাফং। অনেক অনেক গল্প। অদ্রি থেকে প্রকাশিত তার বই এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘অভিযাত্রীর পদচিহ্ন ভোমরা থেকে সাকা হাফং’।
আলাপনে দীর্ঘ পথ কখন ফুরিয়ে গেল টের পেলাম না। তবে প্রচণ্ড তাপ ত্রাহি অবস্থা করে দিয়েছে আমাদের। টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা নদী সাঁতার কেটে শাকিলকে পার করে দিয়ে আসবো এখন পর্যন্ত এমনই পরিকল্পনা।
এভারেস্টের পথে এই লম্বা সফরে পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি অনুষঙ্গ। যা এখনো পুরাপুরি জোগাড় হয়নি। সাহস করে সে পথে নেমে গেছে সেজন্য সাধুবাদ। আশাকরি বাংলাদেশের পতাকা পৃথিবীর সর্বচ্চ পর্বতশৃঙ্গের চূড়াতে আবারো উড়বে। আজকে ৩৪.
সি টু সামিট- এই লম্বা পথের পদযাত্রায় শাকিলের বাড়িতে এক রাত থাকাটা বেশ আবেগঘন ছিল ৷ মায়ের আশীর্বাদ এবং পরম যত্নে রান্না করা খাবার শাকিলের কঠিন পথের প্রেরণা জোগাবে, সঙ্গে আমাদেরও। সকালবেলা বিদায় বেলায় অশ্রুজলে মা ছেলেকে দোয়া করে দিলো। সাংবাদিক ভাইরা আরো কিছু সময় নিলো আমাদের। এরপর বাগচালা গ্রাম থেকে আমরা গতকালের হাঁটার পয়েন্টে এসে হাঁটা শুরু করলাম। আজকে শুরু করতে একটু দেরিই হয়ে গেলো বলা যায়। ফলশ্রুতিতে তপ্ত রোদে আমাদের দগ্ধ হতে হয়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলার সীমানা ছাড়িয়ে টাঙ্গাইল মহাসড়কে ওঠার পর সোজা পথ। গাছপালার নাম নিশানাও নাই। হাইওয়ে দিয়ে হাঁটা বিরক্তিকর কাজ। তারপরও আমাদের হাঁটতে হলো। মির্জাপুর থেকে বিকল্প পথে সেবার আমি হেঁটেছিলাম। তবে তাতে করে কয়েক কিলোমিটার পথ বেশি হাঁটা হবে। শাকিলের হাতে সময় কম, তাই বাংলাদেশের অংশটুকু দ্রুত পার করতে পারলে তার এভারেস্টের পথে কিছু সময় বাঁচবে। পথের মাঝখানে যুক্ত হলো সিজান। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলো, বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী। আজকে সারাদিনের পথ সে পায়ে হেঁটে আমাদের সঙ্গে এলো।
টাঙ্গাইল শহরের কাছাকাছি এলে আরো যুক্ত হলো হেলাল ভাই এবং শাকিল হোসেন। সেবার হাঁটার সময় পথে দেখা হয়েছিল। এবার আবারও সেই হাঁটা পথেই দেখা হলো। রাতে হেলাল ভাইয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ। বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময়টা বেশ চ্যলেঞ্জিং। শাকিলের পায়ে ফোস্কা পড়েছিল। সেই ব্যথাটা ভোগাচ্ছে। গরমে আমাদের গতি কমে আসলো। এদিকে টনি ভালো হাঁটে, সে আমাদের তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে, ভালোভাবে না হাঁটলে সন্ধ্যার পর বেশি হাঁটতে হবে। শহরে ঢোকার ৫ কিলোমিটার আগে সোনিয়া আপা যুক্ত হলো ইফতার নিয়ে। সবাই একত্রে ইফতার করে আবার হাঁটা শুরু। রাত আটটা বেজে গেলো নগর জালফৈ বাইপাস আসতে। আজকের দিনের জন্য এখানেই ইতি।
শহরে আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল বদরউদ্দিন ভাই, আমার আয়রনম্যানের সঙ্গী। তিনি টাঙ্গাইলের একটি ব্যাংকের ম্যনেজার, আন্তরিক মানুষ। অনেকদিন পর বদর ভাইয়ের সাথে দখা হয়ে খুব ভালো লাগলো ৷ আগামীকাল আমরা যমুনা নদী সাঁতরে অন্য প্রান্তে যাবো। আমি শাকিল দুজনই খুব এক্সাইটেড। হেলাল ভাইরাও যুক্ত হবে। রাতে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে থাকার বন্দোবস্ত হলো। আমার খবর পেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা বন্ধু বাবু দেখা করতে চলে এলো কলিগকে নিয়ে। বেশ ক্লান্ত ছিলাম তাই বেশি সময় দিতে পারিনি, ফ্রেশ হয়ে হেলাল ভাইয়ের বাড়ির দিকে চললাম নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে।
হেলাল ভাই ডাকঘরে কাজ করেন। স্পোর্টস এক্টিভিটি এবং স্বাস্থ্য-সচেতনতা নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ। গিয়ে দেখলাম আমাদের জন্য নানা পদের খাবারে তার টেবিল সাজানো। মন আর পেট তৃপ্তিতে ভরে গেলো।
লেখক: ভ্রমণ লেখক, আয়রনম্যান ৭০.৩ এবং বাংলা চ্যানেল ফিনিশার
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ল ম ট র পথ য ক ত হল আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।