বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) মহাপরিচালকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ কর্মসূচির চলার সময় নিরাপত্তার স্বার্থে বিনার প্রধান ফটকে তালা দেয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমঝোতা হলেও স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ডিজির অপসারণ দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

এর আগে ১৬ মার্চ থেকে বিনার মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়। বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক ও এলাকাবাসীর ব্যানারে টানা কর্মসূচি চলছিল। এতে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে যায়। এর মধ্যে গত শুক্রবার আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে মহাপরিচালক নিজ কার্যালয়ে ফেরেন। এমন খবরে গত শনিবার স্থানীয় বিএনপি ও এলাকাবাসীর একাংশ বিনা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে।

আজও মহাপরিচালক কার্যালয়ে এসেছেন—এমন খবরে বিনা কার্যালয়ের সামনে আবারও বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল রশিদ, ময়মনসিংহ মহানগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম, ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম, জেলা দক্ষিণ যুবদলের কোষাধ্যক্ষ রিপন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম আকন্দ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ওমর ফারুক প্রমুখ।

বিক্ষোভকারীরা মহাপরিচালককে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে বলেন, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপক্ষে আওয়ামী পেশাজীবীদের লাঠিমিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডিজি আবুল কালাম আজাদ। গত মাসেও তিনি ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সিয়াম হোসাইন আলীকে চাকরি দিয়েছেন। অবিলম্বে এই ডিজিকে অপসারণ করা হোক, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে আবুল কালাম আজাদের কার্যালয়ে গেলে তিনি প্রকল্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন জানিয়ে বাইরে যান। পরে কার্যালয়ে আসবেন জানালেও ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে বলেন, ‘বাইরে যারা কর্মসূচি করছেন, তাঁরা কী কারণে করছেন জানি না। অফিসের অভ্যন্তরে যে সমস্যা ছিল, আজ সব কলিগের সঙ্গে বসে তা মিটিয়ে নিয়েছি। তাঁরা যেসব যৌক্তিক দাবি দেন, তার সব মেনে নেওয়া হয়েছে।’

ছাত্রলীগ নেতাকে চাকরি দেওয়া প্রসঙ্গে বিনার ডিজি বলেন, ‘আমাদের একটি বড় প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দুই সদস্যের কমিটির মাধ্যমে ফাইল উপস্থাপিত হলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। আমি চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে জানি না। হাজিরার ভিত্তিতে মাসে ২২ দিন কাজ করবেন ওই শ্রমিক।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ব এনপ ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি 

এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’

আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।

আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।

ঢাকা/সৈকত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ